চট্টগ্রামস্বাস্থ্য

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫ কোটি টাকার ভুয়া বিল, দুদকের মামলা

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফুরকানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র (বিল) তৈরি এবং তা ব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে।

অন্য আসামিরা হলেন মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মুন্সী ফররুখ হোসাইন মিন্টু, তার ভাই মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক স্টাফ মুকিত মন্ডল।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক রোববার মামলাটি দায়ের করেন। তিনি জানান, আসামিরা দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলা তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জন্য এমআরআই ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। পরবর্তীতে, মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ৮টি আইসিইউ বেড এবং ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর সরবরাহ করে।

সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলো গ্রহণ বা অর্থ পরিশোধ করেনি। ২০১৯ সালে দুদক এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে এবং তদন্ত শেষে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়, যা বর্তমানে বিচারাধীন। যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সেগুলো হাসপাতালেই রেখে যায় এবং ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিলের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও ব্যয় মঞ্জুরি প্রদান করা হয়নি। এজন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ২০২২ সালে মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যয় মঞ্জুরিপত্র চেয়ে চিঠি দেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যয় মঞ্জুরিপত্র প্রদান করা হয়নি।

২০২৩ সালের ২৬ জুন, মুন্সি ফররুখের ভাই মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পালের স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফুরকানের মোবাইলে পাঠান। মোহাম্মদ ফুরকান সেই ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্রটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বির মোবাইলে ফরোয়ার্ড করেন।

২০২২ সালের ২৮ জুন, আহমেদ এন্টারপ্রাইজের অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আসেন। মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুন্সী ফররুখ, তার ভাই সাজ্জাদ, এবং মুকিত মন্ডল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফুরকানের সাথে মিলে একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র তৈরি করে ডা. শেখ ফজলে রাব্বির একক স্বাক্ষরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি বিল প্রস্তুত করেন। বিলটি একই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিসে পাঠানো হয়। যদিও বিলটি অনুস্বাক্ষর (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বা বিল প্রস্তুতকারীর স্বাক্ষর ছাড়া) ছিল, তারপরও অফিস কপিতে এবং বিল রেজিস্ট্রারে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল। হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল ছাড়করণের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাবরক্ষণ অফিসে বিলটি যাচাই–বাছাইকালে দেখা যায়, অর্থ বরাদ্দ পত্রটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আসেনি, অর্থাৎ চিঠিটি সঠিকভাবে চট্টগ্রামের হিসাবরক্ষণ অফিসে না এসে সেগুনবাগিচার অফিসে এসেছে। সার্বিক পর্যালোচনার পর, এটি ভুয়া জিও হিসেবে চিহ্নিত করে বিলটি বাতিল করে ফেরত পাঠানো হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্টরা ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক উত্তোলন করতে ব্যর্থ হন। আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক ফররুখের নির্দেশে তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন ও মুকিত মন্ডল পরস্পরের সহযোগিতায় এই ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র তৈরি করেন, যদিও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ছিল না এ ধরনের পত্র দাখিল করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *