চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বালুর মাঠে খেলতে হবে না

ফুটবলের জন্য ঘাসের চাদরে ঢাকা মাঠই আদর্শ। কিন্তু চট্টগ্রামের একাডেমিগুলোর বেশ কয়েকটির ফুটবলাররা নিয়মিত অনুশীলন করে সিজেকেএস প্রশিক্ষণ মাঠে। এই তালিকায় ছেলেরা সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা হাতে গোনা। তাদেরই দু’জন সুমাইয়া আক্তার ও তাহমিদা আক্তার। ২০২৩ বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন হওয়া একরাম ফুটবল একাডেমির সদস্য দু’জনেই। অন্যদের সাথে সিজেকেএস প্রশিক্ষণ মাঠে দু’জনেই মেতে উঠেন ফুটবল নিয়ে কসরতে। ছেলেদের সাথে অনুশীলন, অথচ কোন জড়তাই নেই তাদের। বাফুফের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোচ মো. ইকবালের কাছ থেকে পাঠ নিচ্ছিলেন তাদের সবাই। সুমাইয়া ও তাহমিদা জানতেন না যেখানে তারা অনুশীলন করছেন সেটাই ক’দিন পরই শুধু তাদেরই হতে যাচ্ছে।

জানালাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামানের সদিচ্ছার সাথে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের চেষ্টা মিলে সিজেকেএস’র তত্ত্বাবধানে সেখানেই বসছে টার্ফ এবং সেটা বরাদ্দ থাকবে শুধুমাত্র মেয়েদের খেলাধুলার জন্য। টার্ফের সাথে ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও থাকবে জেনে খুশির ঝিলিক দেখা গেলে মেয়েদের মাঝে। সাথে তাদের মাঝে দেখা গেলো আতঙ্কও। এই প্রতিবেদকের কাছেই তারা জানতে চাইলেন, টার্ফের কাজ শুরু হলে আমরা কোথায় যাবো, প্রতিদিন কোথায় অনুশীলন করবো। এ ব্যাপারে তাদের কোচই আশ্বস্ত করলেন। ভালো কিছুর জন্য ছাড়’তো দিতেই হবে। আমরা অল্প ক’দিন অন্য কোন স্থানে অনুশীলনের ব্যবস্থা করবো। তবে একরাম একাডেমির মেয়েরাসহ অন্যান্য একাডেমি এবং বিভিন্নস্তরের ক্রীড়া সংগঠকরা প্রশিক্ষণমাঠকে শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বরাদ্দ দেয়ায় সিজেকেএস সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রামে যে কোন স্তরে খেলাধুলায় অনুশীলনের সুযোগ সুবিধা অপ্রতুল। মেয়দের বেলায় সেটা আরও কম। সাগরিকা মহিলা কমপ্লেক্সে সে সুবিধা থাকলেও শহর থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় অনেকেরই কাছে সেটা সহজবোধ্য নয়। যে কারণে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ খুব করে চাইছেন এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বা তার আশপাশে এমন একটি জায়গা যেখানে মেয়েরা নিয়মিত অনুশীলন করতে পারে। চলতি সময়ে প্রশিক্ষণ মাঠে বিকালে বেশ ক’টি একাডেমি প্রায় শতাধিক কিশোর-কিশোরীদের অনুশীলন করতে দেখা যায়। মেয়েদের সংখ্যা হাতে গোনা, ১০ থেকে ২০ জন। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মত কোচ মো. ইকবালের, সাথে সুমাইয়া ও তাহমিদারও। এমনিতেই অভিভাবকরা মেয়েদের মাঠে খেলতে দিতে চাননা। তার ওপর ছেলেদের সাথে অনুশীলন ভালোভাবে নেন না। প্রশিক্ষণ মাঠ শুধু মেয়েদের জন্য হতে যাচ্ছে, এ সংবাদে নিশ্চিতভাবে খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

শুধু প্রশিক্ষণ মাঠই নয়, জেলা প্রশাসক খুব করে চাইছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ভেন্যুর। বাকলিয়ায় মেয়েদের জন্য পৃথক ভেন্যু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান। এটাও অনুশীলনরত মেয়েরা জানতেন না। অধীর আগ্রহে তারা সকলেই অপেক্ষা করছেন, সেই পূর্ণাঙ্গ ভেন্যুর। নগরীর কালামিয়া বাজার থেকে প্রতিদিন একাই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আসা এসএসসি পাশ করা ডিফেন্ডার সুমাইয়া জানালেন, আমরা ম্যাচ খেলতে পারি খুব কম। তাছাড়া পূর্ণাঙ্গ মাঠে অনুশীলন করতে পারি না। তাই প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ খেলতে বড় মাঠে নেমে খেলতে সমস্যা হয়। সুমাইয়ার সতীর্থ এইচএসসি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত ডিফেন্ডার তাহমিদা যোগ করলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় ও সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন স্যার যদি আমাদের মাসে অন্তত দু’দিন এম এ আজিজ স্টেডিয়াম ব্যবহারের (অনুশীলন কিংবা ম্যাচ) ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে উপকার হতো। আমরা নিয়মিত অনুশীলন করি, তবে কোন টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতা নেই বললেই চলে। সিজেকেএস বা সিডিএফএ যদি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য প্রতিযোগিতাকে ক্যালেন্ডারে নিয়ে আসে তাহলে চট্টগ্রামে মেয়েদের খেলাধুলা অনেকটাই এগিয়ে যাবে।

ঠিক এই কাজটিই করতে চান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তাদের জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে অংশগ্রহণ অবশ্যই বাড়বে। এ জন্য যা করার আমি সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো। প্রশিক্ষণ মাঠ আসছে দ্রুত, বাকলিয়াতে জায়গা পেলেই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুতই শুরু হবে মেয়েদের জন্য পৃথক ভেন্যু নির্মাণের কাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *