চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামেও চলছে ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য

নগরীতে এতোদিন বিভিন্ন অলিগলিতে চলাচল করলেও এবার সড়ক মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। চট্টগ্রাম ও ঢাকা মহানগরে চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অদৃশ্য কোন এক শক্তির বলে এসব গাড়ি দেদারছে চলছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। আর এ চলাচলকে আরও বেগবান করতে কয়েকটি সংগঠন মিলে গড়ে তোলা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ এসব গাড়ি চলতে দেয়া বাবদ নগরীতে প্রতিদিন চাঁদাবাজি হয় কমপক্ষে ৭০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সিএমপির উপ–পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক–পশ্চিম) তারেক আহমেদ জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কাজেই নগরীতে এগুলোর চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। অবৈধ ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশনা হলো রাস্তায় এই গাড়ি দেখামাত্রই ধরা, জরিমানা করা। তবে এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। জব্দ গাড়িগুলো রাখার মতো আমাদের পর্যাপ্ত জায়গা (ডাম্পিং প্লেস) নেই। ফলে গাড়ি ধরে জরিমানা করে একদিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। যেদিন ধরে সেদিনও ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যে কারণে মনে হচ্ছে চালকরা রাস্তায় এই অবৈধ গাড়ি নামানোর সাহস পাচ্ছে।

সূত্রমতে, কোনো রকম সরকারি অনুমোদন ও রাজস্ব আদায় ছাড়াই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। দৈনিক অটোরিকশা প্রতি ১৩০–১৪০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার এই চাঁদার পরিমাণ ১৭০–১৮০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশায় দুই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মধ্যে কেউ কেউ ১৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে। আবার কেউ কেউ ২৩০ ভোল্টের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করে থাকে। এই দুই ধরনের ব্যাটারি চার্জ দিতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিল খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাকি টাকা গ্যারেজ মালিকের মুনাফা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বায়েজিদ, খুলশী, কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবরশাহ থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি চলে ব্যাটারি চালিত রিকশা। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীবাজার থেকে কালুরঘাট ব্রিজ এবং ওয়াসা রোড, পাঠাইন্না গোদা থেকে হামিদচর, ওসমানিয়াপুল থেকে সিএন্ডবি এর আশেপাশের পুরো এলাকা মিলে ১০–১২ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।

বাকলিয়া থানাধীন এঙেস রোড, চকবাজার ধনিয়ারপুল থেকে সৈয়দ শাহ রোড ও বড় কবরস্থান হয়ে পুলিশ বিট, আব্দুল লতিফ হাট থেকে চেয়ারম্যান ঘাট এবং আন্দরকিল্লা ও টেরিবাজার থেকে কালামিয়া বাজার পর্যন্ত পাঁচ হাজার রিকশা চলাচল করে। চকবাজার এলাকার ডিসি রোড, কে বি আমান আলী রোড, নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড এবং এঙেস রোডে চলাচল করে কয়েক হাজার ব্যাটারি রিকশা।

খুলশী থানাধীন জালালাবাদ থেকে ওয়্যারলেস হয়ে সেগুনবাগান রেল স্কুল ও মামা–ভাগিনার মাজার পর্যন্ত, বিজিএমইএ ভবনের সামনে থেকে ঝাউতলা বাজার হয়ে আমবাগান রেলগেট ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে পলিটেকনিক মোড় পর্যন্ত ৪/৫ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।

বায়েজিদ, খুলশী এলাকা ও পাঁচলাইশের হিলভিউসহ আশেপাশের এলাকায় রিকশা চলাচল করে। বায়েজিদ থানাধীন জামশেদ শাহ মাজার রোড, কুলগাঁও আবাসিক এলাকা হতে খাজা রোড, অঙিজেন মোড় থেকে আতুরার ডিপু, চন্দ্রনগর, আরেফিন নগর, বাংলা বাজার টেঙটাইল মোড় ও হিলভিউ আবাসিক এলাকা, রৌফাবাদ কলোনি, বাংলাবাজার বশর কোম্পানির গ্যারেজ পর্যন্ত ৩–৪ হাজার ব্যাটারি রিকশা চলছে।

নগরীর হালিশহর ও পাহাড়তলী থানাধীন ফইল্যাতলী বাজার থেকে সবুজবাগ পেট্রোল পাম্পের মুখ, হালিশহর বি–ব্লক শাহজাহান বেকারির সামনে থেকে আশপাশের পুরো এলাকা, শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে সাগরপাড়, বণিকপাড়া হরি মন্দির, আইয়ুব খানের গ্যারেজ থেকে পাহাড়তলী থানা এলাকার সাগরিকা রোড, বেপারিপাড়া কাসেম কোম্পানির গ্যারেজ হয়ে আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার ২৯টি সড়ক পর্যন্ত ১৫ হাজারের অধিক ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।

ডবলমুরিং থানাধীন বিল্লাপাড়া পুলিশ বিট হয়ে ৯নং ব্রিজ ও ভাঙ্গা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে। এছাড়াও ইপিজেড থানাসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সড়কে আরও পাঁচ হাজারের মত ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে বলে জানিয়েছে গ্যারেজ মালিকরা। তবে সেগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট লাইন পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *