দেশজুড়ে

চাচাতো বোনকে গোপনে বিয়ে করায় সৌরভকে টুকরো টুকরো করেন চাচা

ময়মনসিংহের সুতিয়া নদী থেকে উদ্ধার হওয়া লাগেজের ভেতরে থাকা মৃত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সৌরভের আপন চাচা ইলিয়াসকে খুঁজছে পুলিশ।

সৌরভের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক ছিল তার আপন চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার। গত ১২ মে ইভা ঢাকায় গিয়ে গোপনে সৌরভকে বিয়ে করে ফেলেন। কিন্তু তাদের এ সর্ম্পক মেনে নেয়নি চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইলিয়াস আলী আকন্দ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চাচা ইলিয়াস পূর্বপরিকল্পিতভাবে সৌরভে ডেকে এনে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহত সৌরভের বাবা মো. ইউসুফ আলী।

সোমবার (৩ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টায় এসব তথ্য জানান অবসরপ্রাপ্ত ডাক বিভাগের কর্মচারী নিহত সৌরভের বাবা মো. ইউসুফ আলী।

তিনি বলেন, সৌরভ ও ইভার প্রেমের বিয়ের ঘটনার কয়েকদিন পর ইলিয়াস আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলেছিল, তোর ছেলেকে টুকরো টুকরো করে খুন করব। এটা না করে আমি পানিও খাব না। তখন আমি তার কথা বিশ্বাস করিনি। মনে করেছিলাম এটা তার রাগ-ক্ষোভের কথা। কিন্তু এখন তার কথাই সত্য হয়েছে। আমার ছেলেকে টুকরো টুকরো করে খুন করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে এখন আমার বেঁচে থেকে লাভ কি। আমি আমার ছেলে খুনের বিচার চাই।

হুমকির সত্যতা নিশ্চিত করে নিহত সৌরভের প্রতিবেশী দাদা ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইগবাজ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ইলিয়াস নিহত সৌরভকে টুকরো টুকরো করে খুন করার হুমকি দিয়েছিল। এই হুমকির অডিও কল রেকর্ড আমি শুনেছি এবং তা সংরক্ষিত আছে।

নিহত সৌরভের মায়ের অভিযোগ, ইলিয়াস তার মেয়ে ইভাকে কানাডা পাঠিয়ে দেওয়ার পর আমার ছেলেকে ডেকে এনে খুন করেছে। এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সৌরভের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইগবাজ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্মম এই ঘটনায় নিহতের পরিবার ও স্বজন ছাড়াও প্রতিবেশীদের মধ্যে আহাজারি সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার খলনায়ককে ইলিয়াস আলী আকন্দকে খুঁজছে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক থাকায় এবং তার মোবাইল বন্ধ থাকায় এখনও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব দ্রুত সময়েই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।

এর আগে রোববার (২ জুন) সকালে ময়মনসিংহ সদর ও মুক্তাগাছা উপজেলার সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে এক অজ্ঞাত তরুণের চার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় সুতিয়া নদী থেকে কালো রঙের একটি ট্রলি লাগেজ থেকে মরদেহের তিন খণ্ড এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মরদেহের খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, নিহতের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত চলমান আছে। বিস্তারিত খুব দ্রুত জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *