চার মন্ত্রী-এমপির ‘নো টেনশন’
ঘনিয়ে এসেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। রাত পেরোলেই ভোট। বড় ‘বিরোধী’ প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া এই নির্বাচনেও চট্টগ্রামের অন্তত ১০টি আসনে ‘দোদূল্যমান’ আওয়ামী লীগের নৌকা। দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে এসব আসনের কারও নৌকা ‘দুলছে’, কারওবা ‘ভেসে’ যাওয়ার পথে। তবে স্বতন্ত্রেরও চাপ না থাকায় একেবারে ‘নো টেনশনে’ আছেন চার আসনের নৌকার প্রার্থী।
তাঁরা হলেন— চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তাঁদের সঙ্গে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার মতো কেউ নেই! চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে ভোটের মাঠে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও তাঁকে হিসাব-নিকাশে রাখছেন না সাধারণ ভোটাররা।
নৌকাবিহীন দুই আসনেও ‘নৌকা’
রাউজানে ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। পরবর্তীতে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন নৌকার এ প্রার্থী। জয়ের ধারাবাহিকতায় বজায় রেখে চতুর্থবারের মতো দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও অনেকটা জয়ের পথে চট্টগ্রাম ৬ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির মো. শফিউল আলম চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্টের স ম জাফর উল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজম। যদিও এই চার প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর সঙ্গে তাদের একদমই জমবে না বলে মনে করছেন ভোটাররা। অনেকটা ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ধরে হিসাব-নিকাশ করছেন এই এলাকার ভোটাররা।
রাঙ্গুনিয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. হাছান মাহমুদ। পরবর্তীতে দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও ধারাবাহিকভাবে জয় পান তিনি। এবার আসনটিতে তাঁর সঙ্গে ভোটের মাঠে রয়েছেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন—ইসলামিক ফ্রন্টের আহমদ রেজা, তৃণমূল বিএনপির খোরশেদ আলম, জাতীয় পার্টির মুছা আহমেদ রানা, ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ ইকবাল হাছান ও সুপ্রিম পার্টির মোরশেদ আলম।
যদিও হাছান মাহমুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার মতো কেউ নন তাঁরা! এমন কি কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই এই আসনে। তাই তাদেরকে পাশ কাটানো কোনো ব্যাপারই না হেভিওয়েট এই আওয়ামী লীগ নেতার।
চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রামের অন্য প্রার্থীদের চেয়ে ‘নির্ভার’ রয়েছেন এই আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দ্বিতীয়বারের মতো ‘জয়ের পথে’ রয়েছেন তিনি। এখানে মাঠে আরো আছেন ন্যাপের মিটুল দাশগুপ্ত, ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, ইসলামিক ফ্রন্টের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন, জাতীয় পার্টির সানজিদ রশীদ চৌধুরী ও তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার। তবে ভোটারদের হিসাব নিকাশে নওফেলই এগিয়ে। ভোটের মাঠে ‘অপরিচিত’ প্রার্থীদের মানতে নারাজ বেশিরভাগ ভোটার। মহিউদ্দিনপুত্রই তাঁদের এমপি— হিসাব কষে ফেলেছেন অনেকে।
আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনে গত তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে লড়ছেন আরও ছয় প্রার্থী। তবে তাঁদেরও হিসাবে রাখেনি দুই উপজেলার অনেক মানুষ। ফলে ভোটের মাঠে বাকি প্রার্থীদের ‘এক শটে’গোল খাওয়াচ্ছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
তাঁর আসনে বাকি প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আবদুর রব চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মকবুল আহম্মদ চৌধুরী, সুপ্রিম পার্টির মো. আরিফ মঈনুদ্দিন, খেলাফত আন্দোলনের মৌলভি রশিদুল হক, ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবুল হোসেন এবং ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ হোসাইন।