চট্টগ্রাম

চেয়ারম্যান-মেয়র ও মেম্বারদের অনুপস্থিতিতে বিঘ্নিত জনসেবা

চট্টগ্রাম জেলার ১৬ উপজেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে মাঠে আছেন মাত্র দুইজন উপজেলা চেয়ারম্যান। বাকি ১৪ জনই আত্মগোপনে চলে গেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও সবকটি পৌরসভার মেয়র ও বেশির ভাগ ইউপি চেয়ারম্যান এলাকাছাড়া। এতে জনসেবায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। এদিকে, জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রও তছনছ হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ১৬ উপজেলা পরিষদের মধ্যে বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশাসনিক কার্যালয় প্রকাশ্যে পরিচালনা করে আসছেন। বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল হক ও চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন নিয়মিত অফিস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মে মাস থেকে সারাদেশের সঙ্গে চট্টগ্রামেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়। শেষ হয় জুন মাসে।

জানা যায়, আত্মগোপনে চলে যাওয়া ১৪ উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশের পট-পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি।

এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পৌরসভা ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকটি পৌরসভা কার্যালয় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। ২-৩ মাসেও এসব পৌরসভায় স্বাভাবিক কার্যাক্রম শুরু করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
বোয়ালখালীর ইউএনও হিমাদ্রী খীসা পূর্বকোণকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। ভয়-আতঙ্ক দূর করে জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সুধীজন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে জন-নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের নেতা। দেশের পট-পরির্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান তারা। উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও বেশির ভাগ ভাইস চেয়ারম্যানও গোপন স্থানে চলে যান।

শুধু উপজেলা চেয়ারম্যান নন, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরাও আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়াও মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট, বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ পৌরসভায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এসব পৌরসভার আসবাবপত্র থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ভেঙেচুরে তছনছ করে ফেলা হয়েছে।

কথা হয় একাধিক পৌরসভার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা জানান, পৌর কার্যালয়ের আসবাব থেকে শুরু করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে জনগণ ও পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ছিল। লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পৌরসভায়। তবে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে আরও অন্তত ৩ মাস সময় লাগবে।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা গোপনে থাকায় তৃণমূল প্রশাসনেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৯৫ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এমনকি অনেক মেম্বারও এলাকাছাড়া।

জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপনে চলে যাওয়া এবং কার্যালয়ের কম্পিউটার-ল্যাপটপ ভেঙে ফেলা ও লুট হওয়ার কারণে জনসেবা চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানুষের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় সনদ ও অন্যান্য কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *