আই সি এল ডি এস নাগরিক সংলাপ জাতীয় নির্বাচন ও স্থিতিশীলতা সুচনা পত্র
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। নির্বাচনী আমেজ দেশের শহরে- বন্দরে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নির্বাচন কমিশনের তফসীল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে একদিকে নির্বাচনী প্রচার জোরে-শোরে শুরু হলেও অপরদিকে কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন শুধু নয় নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়ে দৃশ্যমান ভাবে নাশকতার পথ বেছে নেয়ায় জননিরাপত্তার হুমকি যত না তৈরি হয়েছে তার চেয়ে জনমনে শঙ্কা বেড়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত নাশকতায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে। অপরদিকে নির্বাচন প্রচারণায় উৎসবের পাশাপাশি প্রতিপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে, কিছু সহিংস ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
সরকার পরিবর্তনের একমাত্র বৈধ ও শাসনতান্ত্রিক উপায় হল নির্বাচন। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করবেন একটি সংসদ ও সরকার গঠন করে। গণতন্ত্রের মুল ভিত্তি স্থাপিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। জনগণের সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল দেশ শাসনের ম্যান্ডেট নিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আহরণ করবেন। এই প্রচলিত গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করে নির্বাচনের চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা করার সৎ সাহস দেখাতে বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে কিছু রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতার পালা বদলের জন্য নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে গিয়ে একাধিবার নির্বাচন বর্জন করে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার সিড়ি খুঁজে বেড়িয়েছে এবং এই নির্বাচনে কোন ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়নি। এবার দেশের মানুষের কল্যাণের বিপরীতে বিদেশী শক্তিকে প্রভাবিত করে দেশের চলমান অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের গতিধারাকে রুখে দেবার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার স্বপ্নের জাল বুনে সময় অতিবাহিত করছে। অপরদিকে গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্র তৈরি করার অপচেষ্টায় সহিংসতা ও নাশকতাকে পুঁজি করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের ছক কষছে। নির্বাচন স্থিতিশীলতার মৌলিক উপাদান। নির্বাচন বানচাল মুলতঃ স্থিতিশীলতা বিনষ্টের একটি অপচেষ্টা মাত্র। নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণের ব্যপকতা দৃশ্যমান। গণতন্ত্র সুরক্ষা ও পরিশিলিত করতে নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম, অতএব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা অথবা নির্বাচন বর্জন স্থিতিশীলতা অর্জনে কোন পথ জাতির জন্য কল্যাণকর হবে তার উপর নাগরিক মতামত খোঁজার আজকের প্রচেষ্টা বড় ভুমিকা রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার একমাত্র বাংলাদেশের জনগণের। বিদেশীদের অতি আগ্রহ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। ফলে বিশ্ব বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে বিভক্ত হযে পদেছে। নির্বাচন নিয়ে সহিংসতাব বিরুদ্ধে কথা বললেও কার্যত ভোট বিরোধী কর্মকাণ্ডের পর্দার অন্তরালে। উস্কানি দিয়ে আসছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দৃশ্যমান হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে নিজ ইচ্ছামত সংজ্ঞায়িত করে নতুন ষড়যন্ত্রের বীজ বুনতে চাচ্ছে। আমরা খুঁজতে চায় অংশগ্রহন মুলক নির্বাচনের জন্য কোন বিশেষ দলের অংশগ্রহণ না জনগণের অংশগ্রহণ অধিক গুরুত্ব বহন করে।
২৮শে অক্টোবরের রাজনৈতিক প্রোগ্রামের নামে সহিংসতার মাধ্যমে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা, হাসপাতালসহ বিচারপতিদের বাসভবনে হামলা, গাজিপুরে রেল লাইন কেটে যাত্রীবাহী ট্রেন ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা, তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতি নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করে গণতন্ত্রকে উপড়ে ফেলে অন্য কোন বিকল্প খোঁজার অপচেষ্টা মাত্র। নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে কি উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায় ভোট বিরোধী রাজনীতি? হরতাল, অবরোধের নামে নাশকতার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বিনষ্টের মাধ্যমে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রের উত্থানের পথ সুগম করে দক্ষিন এশিয়ার স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ করে কোন বিশেষ পরাশক্তির স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি খেলা দেশের মানুষের স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করার পরিবর্তে দেশের মানুষের দুঃখ ডেকে আনার কৌশল হিসাবে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে অস্থিতিশীলতা ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতন্ত্র রক্ষার নামে গণতন্ত্রকে সমাহিত করতে চাচ্ছে কিনা তা খুঁজে দেখার দায় নাগরিক সমাজের।
যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হানাদারদের পক্ষ নিয়ে বাঙ্গালি নিধনে লিপ্ত ছিল। সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিকাশকে রুখে দিতে ভোট বিরোধী রাজনীতি তৈরি করে কিছু বিদেশী শক্তির সাথে আঁতাত করে দেশকে অস্থিতিশীল করে মানুষের আয়ের উৎসকে ঝুঁকিতে ফেলে গরিবের পেটে লাথি মেরে অগণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় আহরণের রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে নাগরিক সমাজকে গণতন্ত্র সুরক্ষিত করতে ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে অনেক গল্প তৈরি করে নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের আস্থা বিনষ্ট করার অনেক কৌশলের উপস্থিতি দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখাতে নির্বাচন কমিশন সক্ষমতা দেখাচ্ছে এবার। সরকারকে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা থেকে আলাদা রেখে নির্বাচন করার অনেক নিদর্শন দেখা গেছে ইতোমধ্যে। সরকার ও শাসকদলের সহযোগিতাও অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে উল্লেখ করার মত অগ্রগতি দৃশ্যমান।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাহিদাকে পুঁজি করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করে দেশে ও বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপ কৌশল রুখতে আমরা উন্মুক্ত মনোনয়ন প্রক্রিয়া দেখতে পেলাম। নির্বাচন বর্জন বাংলাদেশের ভোটারদেরদল ভিত্তিক প্রতীকে ভোট দেবার মানসিকতা থেকে বের করে এখন ব্যক্তি ভিত্তিক পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের পথে নিয়ে গণতন্ত্রের প্রকৃত মর্মকে উজ্জীবিত করেছে। প্রতিটি আসনে অনেক প্রার্থীর উপস্থিতি ভোটারদের পছন্দের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ভোটার উপস্থিতি অতীতের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে বেশি হবে বলে অনুমান করা যায়। ভোটারের অধিক উপস্থিতি ও প্রার্থিতার সংখ্যা, বৈচিত্রতা এবং ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দলের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে নির্বাচনকে বর্জন উপেক্ষা করে কার্যত অংশগ্রহণমূলক করে তুলেছে। ফলে নির্বাচন বর্জনের কৌশলকে সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করে নির্বাচন বিরোধীদের খাদের মুখে টেনে এনেছে। নির্বাচন বর্জনের রাজনৈতিক দলের অনেক নেতার নির্বাচনে প্রার্থী হবার নজীর নেতৃত্বের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য বেশ কিছু নতুন দলের জন্ম নির্বাচনের বিপক্ষ শক্তিকে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জনগণের প্রত্যাশা কে সম্মুখে তুলে ধরেছে।
ভোট থেকে ভোটারদের বিরত রাখার জন্য রাজনৈতিক তৎপরতার উপস্থিতি দৃশ্যমান। ভোট বর্জন করে নিঃসন্দেহে বর্জনকারীদের রাজনৈতিক বিকল্প সংকুচিত হয়ে অনেক পথ বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে রাজনীতি বিশ্লেষকদের ভাবনা যেমন খেই হারিয়ে ফেলেছে তার চেয়ে ভোট বর্জনের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ যৌক্তিক কৌশলের অনুপস্থিতি মানুষের মনে নতুন শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। অপরদিকে দলীয় নেতা কর্মীদের হতাশায় নিমজ্জিত করেছে।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সফলভাবে অনুষ্ঠানের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে। মানুষ নিঃসংকোচে নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন সে রকম নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশন সফল হবে যদিও অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হবে। ভোট দেয়া বা না দেয়ার অধিকার নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার বলে মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় মাঠের খেলায় জনগণ কাকে লাল কার্ড দেখায়?