তৈরি হচ্ছে তালিকা, প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে সে সবে যারা নানাভাবে সহায়তা করেছেন তাদের খুঁজছে গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ওই তালিকা ধরে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, র্যাব মহাপরিচালক ও পুলিশ প্রধান থাকাকালে বেনজীরকে সহায়তাকারীরা নানাভাবে সুবিধা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যাই বেশি।
তাছাড়া আছেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও কথিত বিভিন্ন পেশার লোকজন। যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম আসছে তারা বর্তমানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত আছেন। কেউ কেউ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আছেন পুলিশ সদর দপ্তরেও।
ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও গাজীপুরে জমি দখলের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ বর্তমানে সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন। দুই-একদিনের মধ্যে তিনি দুবাই যেতে পারেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে তার দেশে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশে। আগামী ৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে তলব করেছে। আইনজীবীদের সঙ্গে এ নিয়েও কথা বলছেন বেনজীর আহমেদ। সময় নেবেন নাকি আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকের অনুসন্ধানের জবাব দেবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশে থাকা ঘনিষ্ঠ লোকজন ও স্বজনদের সঙ্গে। সরকারের ‘ভালো বার্তা’ পেলে তিনি দেশেও আসতে চান বলে ঘনিষ্ঠদের বলেছেন।
এই প্রসঙ্গে বেনজীরের ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, মিডিয়ায় যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সঠিক না। তিনি ন্যায়বিচার দাবি করেছেন। দুদকের তলবের জবাব দেবেন তিনি। তিনি সশরীরে আসতে না পারলে আইনজীবীর মাধ্যমে তা করবেন। এইক্ষেত্রে সময় চাইতে পারেন বেনজীর আহমেদ।
নাম প্রকাশ না করে বেনজীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুদকের তলব ও তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই তিনি সপরিবারে সিঙ্গাপুর গেছেন। সামনের দিনগুলোতে কী ঘটবে তিনি আগাম ওয়াকিবহালও আছেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুবই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এমনও হতে পারে পরিস্থিতি ঠিক থাকলে তিনি দেশে এসে দুদকে আসবেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খণ্ডন করবেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ যেভাবে দুর্নীতি করেছেন তাতে অনেকেরই সহায়তা আছে। একার পক্ষে তিনি এত বড় দুর্নীতি করতে পারবেন না। সহায়তাকারীদের মধ্যে পুলিশের লোকজনই বেশি।অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টর পদের কর্মকর্তাও আছেন। তাদের মধ্যে ১৫, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৪, ২৫, ২৭, ২৭ ও ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তার সংখ্যাই বেশি। তারমধ্যে কয়েকজন আছেন চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভাওয়াল রিসোর্টে বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার শেয়ার আছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম রেঞ্জের একটি জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও সাতক্ষীরায় জমি কিনতে বেনজীরকে সহায়তা করেছেন। যারা তাকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন প্রয়োজনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, পূর্বাচলে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা জমির ব্যবসার নামে নিরীহ লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। ‘আনন্দ হাউজিং’ নামে একটি প্রজেক্টে বেনজীর আহমেদ ছাড়াও এক কর্মকর্তার ৩৬ বিঘা জমি আছে। তিনি এত জমির মালিক কীভাবে হলেন তা খুঁজে বের করা উচিত। এই প্রজেক্টের সঙ্গে অবসরে যাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত। তাদের সঙ্গে বেনজীর আহমেদের সুসম্পর্ক আছে। জায়গা জমি দখল করতে ও কিনতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) তৈমুর ইসলাম।
১৯৯৫ সালে সাব ইন্সপেক্টর (উপপরিদর্শক) হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। অসদাচরণের জন্য ২০০২ সালে তাকে একবার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি বিভাগীয় মামলায় জয়ী হয়ে ২০১০ সালে চাকরি ফেরত পান। ওই সময় বেনজীর আহমেদ ডিএমপি কমিশনার ছিলেন। ২০১৩ সালের জুনে তৈমুর পরিদর্শক হন। ওই সময় থেকেই তিনি বেনজীর আহমেদের সবকিছু দেখাশুনা করতেন। এমনকি ২০২১ সালে তাকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।