দশ মাস ধরে কমিটি নেই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের
প্রায় ১০ মাস ধরে কমিটি নেই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের। এতে জেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ একাধিকবার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে আওয়ামী লীগের জেলার শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বৃত্তে আটকে যায় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া।
নানা অভিযোগের কারণে ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্ত করেছিলেন। একই সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ ছাড়াও দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন বাঁশখালী উপজেলা, বাঁশখালী পৌর শাখা, বাঁশখালী সরকারি আলাওল কলেজ শাখা ও সাতকানিয়া সরকারি কলেজ শাখার কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে কমিটি ছাড়াই চলছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি।
নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৪ অক্টোবর পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করেছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। ৬শ নেতাকর্মী বায়োডাটা জমা দিয়েছেন। জেলা কমিটির পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার জন্য একাধিকবার প্রক্রিয়া করা হয়েছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টানেল উদ্বোধন ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসভা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যেসব জেলায় কমিটি নেই, সেগুলোতে কমিটি দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখারও কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট অস্থিরতার কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। পরিস্থিতি ঠিক হলে চলতি মাসের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা হতে পারে।’
২০১৭ সালে ১৪ অক্টোবর এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ২০২০ সালের ৪ মার্চ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির রূপরেখা অনেকটা প্রস্তুত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটির রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আনোয়ারা উপজেলার এক প্রার্থী আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির পট-পরিবর্তনের হাওয়ায় পিছিয়ে পড়েছেন সেই পদপ্রত্যাশী।
জেলা ছাত্রলীগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সাতজনের তালিকা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে রয়েছে সাতকানিয়ার ইরফান উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, এয়াছিন চৌধুরী জনি, কর্ণফুলী উপজেলার সাজ্জাদ হোসেন, চন্দনাইশের সালেহীনুর জামান চৌধুরী তানভীর, বাঁশখালীর মামুনুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারার রবিউল হোসেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার কথা বলেছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কারণ শোকের মাস আগস্টে কোনো কমিটি গঠন করা হবে না।’ দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আশা করছি, সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে দ্রুত কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, ৬ শতাধিক নেতাকর্মী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও অন্যান্য পদে আসতে সিভি জমা দিয়েছেন অনেকেই। বায়োডাটা জমা দেওয়ার পর থেকেই জেলা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা।