নৈতিকতার অভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে: গণপূর্তমন্ত্রী
দ্রুত নগরায়ন, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের অভাব ও নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা শহর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে শহরের উন্মুক্ত বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
নির্মাণের মান নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং কোড ও অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডসমূহ মেনে চলার জন্য যে প্রক্রিয়া আবশ্যক বর্তমান বাস্তবতায় তা অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে রাজউক আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অন আরবান আর্থকুয়েক রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আন্তর্জাতিক দলনেতা ড. এসকে ঘোষ, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিমিরিও মেগুরো, বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমদ আনসারী ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ প্রমুখ।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ভবনের তদারকির সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে জনগণকে ভূমিকম্প, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এ সময় তিনি দ্রুত নগরায়ন, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের অভাব ও নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ ও বিল্ডিং কোড ও অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডসমূহ মেনে চলার প্রক্রিয়া অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হয় বলে মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকার দ্রুত বৃদ্ধি ও অভিবাসনের ফলে ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ঝুঁকি-সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন নীতি ও কৌশলসমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে একটি স্থায়ী ও ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।
সম্প্রতি বড় কোনো ভূমিকম্পের ঘটনার অনুপস্থিতির কারণে শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও এই ধরণের ঘটনার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কৌশলসমূহের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের আরও সমন্বিত পদ্ধতি প্রণয়ন প্রয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশে বিশেষ করে শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত কোনো জাতীয় নীতি নেই। যদিও একটি ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ শহর নির্মাণে এ ধরনের একটি সমন্বিত জাতীয় নীতি প্রণয়ন আবশ্যক।
সেমিনারের গেস্ট অব অনার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানের দূরদর্শী পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের ঢাকাকে গড়ে তুলবে। ১২৫ বছর ধরে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সহসাই একটি বড় ভূমিকম্প হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব এ কাজটি করতে হবে।
সেমিনারে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, বিগত ১০ বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগরি ও দক্ষ জনবল এবং সংগ্রহকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ল্যাবরেটরি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ থেকে দেশের সম্পদ ও জনগণের জান-মালের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে বিপুল সামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ প্রয়োগ ও পরিচালনা করা প্রয়োজন। উল্লিখিত সামর্থ্য টেকসইভাবে প্রয়োগের জন্য একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা আবশ্যক।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, বর্তমান প্রচলিত নির্মাণ কাজের অনুমতি প্রদানপত্র (সিপি) পদ্ধতিটি যুগপোযুগী এবং প্রকৌশলগত পদ্ধতিতে না হওয়ায় কাঠামো নকশা পরীক্ষা ও ভবন নির্মাণ তদারকি করা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
এই সেমিনারে বক্তারা বিল্ডিং কোড এনফোর্সমেন্ট ও আপডেটিংয়ের বিষয়ে আলোকপাত করেন। কারণ, একটি আপডেটেড বিল্ডিং কোড ছাড়া টেকসই ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ইনফ্রাস্টাকচার বা স্মার্ট সিটি ডেভেলপমেন্ট সম্ভব নয়। এ বিষয়ে এস কে ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড ২০২০ সালের নামে গেজেট হলেও তা আসলে ১৪ বছরের পুরনো। যার ফলে হাইস্ট্রেন্থ গ্রেড রিবার (যেমন ৮০ বা ১০০ গ্রেড রিবার) থেকে শুরু করে অনেক উন্নত নির্মাণ পণ্য ব্যবহার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এ সকল পণ্য টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই, বিল্ডিং কোড আপডেটিংয়ের বিষয়টি প্রতি ৫-৬ বছর পর পর যেন প্রফেশনালদের মাধ্যমে করা হয়।