পানিতে টইটম্বুর কাপ্তাই হ্রদ, বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বোচ্চ উৎপাদন
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এতে করে চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে দেশের বৃহত্তম হ্রদটি। বর্তমানে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার সাথে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হয়েছে। অথচ কয়েকমাস আগেও পানি কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছিল হ্রদের ওপর নির্ভরশীল পাহাড়ের হাজারো মানুষ। একই সঙ্গে মৌসুমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।
কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই বর্ষা কাপ্তাই হ্রদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। কেননা রাঙামাটির মধ্যে বিলাইছড়ি, জুড়াছড়ি সহ কয়েকটি উপজেলা আছে যেগুলোর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম নৌপথে। যখন কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যায় তখন ওইসব উপজেলার মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। তাই কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পেলে সবার উপকার হয়। তাছাড়া কাপ্তাই হ্রদে এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে হ্রদে মাছ ধরা শুরু হলে জেলেরাও এর সুফল ভোগ করবে।
আবার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পানি বৃদ্ধি পেলে হ্রদের পাশে থাকা অনেকের বাসা বাড়ি ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। এতে করে কেউ কেউ ক্ষতির সম্মুখীনও হবে। তারপরও সবাই চায়, কাপ্তাই হ্রদ চিরচেনা রূপে ফিরে আসুক।
কাপ্তাই জেটিঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার শীতল সরকার জানান, বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বোটচালক ও যাত্রীদের মাঝেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট সচল রয়েছে এবং সোমবার ( ১৯ আগস্ট) পর্যন্ত ২১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট দিয়ে সর্বমোট ২১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তৎমধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নং ইউনিটে ৪৬ মেগাওয়াট, ২ নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট, ৩ নং ইউনিটে ৪৯ মেগাওয়াট, ৪ নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট এবং ৫ নং ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্টোল রুমের তথ্য অনুযায়ী রুলকার্ভ অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ৯৪ দশমিক ৭৬ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) পানি থাকার কথা থাকলেও সোমবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টা পর্যন্ত লেকে ৯৮ দশমিক ২৫ এমএসএল পানি রয়েছে। অর্থাৎ কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভের চেয়ে বেশি রয়েছে।
প্রসঙ্গত কাপ্তাই হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ মিনস সি লেভেল (এমএসএল) এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৩০ হতে ২৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া প্রায় ১১ হাজার ১২২ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই কাপ্তাই হ্রদ ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর সৃষ্টি হয়। যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদ হিসেবে পরিচিত।