জাতীয়

পুলিশ যুগোপযোগী ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পুলিশ বাহিনী আজ একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ, গতিশীল ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে অনুষ্ঠেয় ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এবং অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে জাতির পিতা যে বাহিনীর পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তা হলো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি, ঝুঁকি ভাতা চালু, রেশন প্রাপ্তির হার দ্বিগুণ এবং প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করেছি। ১৯৯৮ সালে আমরাই প্রথম পুলিশ সুপার পদে একজন নারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ কোটি টাকা সিড মানি দিয়ে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, পুলিশ স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠা, পুলিশের জনবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আমাদের এসব সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে পুলিশ বাহিনী আজ একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, দক্ষ, গতিশীল ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে আমরা ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। পদমর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন পদ সৃষ্টি এবং বিভিন্ন স্তরে বিপুল সংখ্যক পদোন্নতি প্রদানসহ গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আমরা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, অ্যান্টি টেরোরিজম, কাউন্টার টেরোরিজম, নৌ-পুলিশ, এমআরটি পুলিশ ও এসপিবিএনসহ অনেক নতুন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্বত্য জেলাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় কয়েকটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। আমরা পুলিশ স্টাফ কলেজকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেছি। আমরা থানা, ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দিয়েছি।’

১০ তলা ভবন করে রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পুলিশ বাহিনীর জন্য ডিএনএ ল্যাব, ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এফআইএস) ও আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করেছি। আকাশপথে সক্ষমতা বাড়াতে পুলিশের এয়ার উইং গঠন করা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সবসময় জনগণের সেবা করাই প্রতিটি পুলিশ সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব। আমার প্রত্যাশা, মানবীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে সততা, নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। রূপকল্প-২০৪১-এর সেই স্মার্ট বাংলাদেশে পুলিশকেও হতে হবে আধুনিক, যুগোপযোগী এবং স্মার্ট।’

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে নতুন দিনের নতুন চ্যালেঞ্জ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে এবং পুলিশের গৌরব সমুন্নত রাখতে সদা সচেষ্ট থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ বাহিনীর প্রায় ১৪ হাজার বাঙালি পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ১১০০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য শহীদ হন। দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্বের পরীক্ষায় বারবার উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার সেই কালরাতে পুলিশের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান ঘাতকদের বাধা দিতে গিয়ে বিনা দ্বিধায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। দেশবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির আগুনসন্ত্রাস মোকাবিলা ও জঙ্গিবাদ দমনসহ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেক অকুতোভয় পুলিশ সদস্য।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

শেখ হাসিনা ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য সময়ে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এছাড়া ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪’-এর সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। খবর: বাসস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *