প্যান্ট পরা লোক দেখলেই পালানো চোর ধরতে লুঙ্গি পরে অভিযান
নগরীর আকবরশাহ থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে গেল চার মাসে একের পর এক পাঁচটি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ পায় পুলিশ। প্রতিটি ঘটনায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযানে নেমে তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোরচক্রের মূলহোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শুরুতে এসব ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মূলহোতা মেহেদী হাসান মুন্না ও তার সহযোগী মো. রিয়াদ হোসেনকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। মুন্না পুরো কাজের নেতৃত্ব দিলেও চুরির আগে ঘটনাস্থল রেকি করেন রিয়াদ। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামুন খন্দকার নামের একজনের কথা জানান। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার বাসিন্দা মামুনসহ তিনজন মূলত চোরাই মোটরসাইকেলের ডিলার। চোরাই মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তারা। চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির কাজে জড়িত থাকায় খুব সতর্কভাবে চলাফেরা করেন মামুন, কোনো প্যান্ট পরা লোক দেখলেই এড়িয়ে চলেন তিনি। নিজ এলাকার একটি সড়কে দাঁড়িয়ে চোরাই মোটরসাইকেল সংগ্রহ ও লেনদেন করে থাকেন মামুন। গ্রেপ্তার দুজনের কাছে এমন তথ্য পেয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় কৌশলী অভিযান চালায় পুলিশ। আভিযানিক দলের সদস্য সহকারী উপপরিদর্শক এনামুল হক লুঙ্গি পরে হাতে কাস্তে নিয়ে কৃষক সেজে অবস্থান নেন ওই পথে। তবে ধূর্ত মামুন এড়িয়ে যান ওই পথ, তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই পথের পাশের এলাকার একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে তাকে আটক করেন আভিযানিক দলের অন্য সদস্যরা।
পরবর্তীতে তাদের কাছে পাওয়া তথ্যে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চুরি তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল। উপপরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘বড়সড় টিম ছিল আমাদের। যেখানে চোর আর মামুন নামের ওই লোক দেখা করে, লুঙ্গি পরে কৃষক সেজে আমি সেখানে অবস্থান নিয়েছিলাম। কারণ মামুন লোকটা খুবই ধূর্ত, সে প্যান্ট পরা কারো পাশ দিয়ে হাঁটেও না।’তাদের গ্রেপ্তার ও চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) জনসংযোগ কর্মকর্তা (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় নগর থেকে দুইজন ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৩টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন, মেহেদী হাসান মুন্না (২২), মো. রিয়াদ হোসেন (২০), মো. মামুন খন্দকার (৩০), জিহাদ হোসেন (১৯) এবং শাহিনুল ইসলাম শুভ (১৯)। তাদের মধ্যে রিয়াদ নোয়াখালীর সুধারাম এলাকা এবং অন্যরা কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার বাসিন্দা।
গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই পেশাদার চোর। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাত্র ১০-২০ সেকেন্ডের মধ্যে মোটরসাইকেল চুরি করতে সক্ষম তারা। তাদের মধ্যে মেহেদী হাসান মুন্নার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা কাজী মো. তারেক আজিজ।