কক্সবাজারচট্টগ্রাম

প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

শাহেদ আর মামুন দু’জন দু’জনের ঘনিষ্ট বন্ধু। দীর্ঘদিন ধরে দু’জনের এক সাথে ব্যবসা, আবার এক সাথে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ প্রেম। ওই প্রেমিকার অন্তরঙ্গ আপত্তিকর ছবি নিয়ে ঘটে বিপত্তি। এ কারণে প্রেমের বলী হলেন মামুন। গত ৬জুলাই ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে বন্ধু মামুনকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শাহেদ।

পরে মঙ্গলবার ৯ জুলাই রাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন মুল পরিকল্পনাকারি শাহেদ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত শাহেদ এমন পিলেচমকানো তথ্য দিয়েছেন বলে জানান কক্সবাজার র‌্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল আহসান।

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-১৫ এর কক্সবাজার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি জানান, কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের খুরুলিয়াস্থ ঘাটপাড়া এলাকার মৃত মো: নবী হোসের ছেলে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (৩০) সাথে ঈদগাঁও মাছুয়াখালী সিকদারপাড়া গ্রামের মো: মতিউর রহমানের ছেলে মো: শাহেদ হোসেন (৩০) দু’জন দু’জনের ঘনিষ্ট বন্ধু। দু’জনই ইলেক্ট্রনিক ব্যবসায়ী। কক্সবাজারের লিংক রোডস্থ বাজারে যৌথভাবে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের একটি শো-রুম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই বন্ধুর শেয়ারিং ব্যবসার পাশাপাশি আরও একজন পাটনার হিসাবে শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনও যৌথ ব্যবসার অংশীর হন। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীক পুঁজি বেড়ে দাড়ায় সাতাশ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে নিহত আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের ছয় লক্ষ টাকা, মোঃ শাহেদ হোসেনের ছয় লক্ষ টাকা এবং শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের পনেরো লক্ষ টাকা বলে জানায়। এরই মধ্যে ঈদগাঁও এর এক সুন্দরী মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এ দুজন বন্ধু। আর ঐ মেয়ের সাথে শাহেদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছিল মামুনের কাছে। সেই ছবিগুলো না দেয়াতে ক্ষোভ জমে ছিল শাহেদের। একদিকে টাকার লোভ, অন্যদিকে প্রেমিকের আপত্তিকর ছবি। তাই, পরিকল্পনা অনুযায়ী বেড়াতে যাবার নাম করে রামু রশিদনগর ইউনিয়নের কালিরছড়া এলাকায় একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে মামুনকে হত্যা করে শাহেদ ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।

গত ৬ জুলাই রাতে নিঁখোজের পর পরদিন সকালে রশীদ নগর রেল লাইনের পাশে উদ্ধার হয় মামুনের লাশ। পরে নানা রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহেদকে আটক করে র‌্যাবের সদস্যরা।

র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তারকৃত মো: শাহেদ প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। র‌্যাবকে শাহেদ জানিয়েছেন, ওইদিন রাত ৮টার দিকে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মোটর বাইক নিয়ে ঈদগাঁওর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় দুই বন্ধু।পথিমধ্যে কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহেদ বন্ধু আব্দুল্লাহ-আল-মামুন’কে মোটর সাইকেল থামাতে বললে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন মোটর সাইকেলটি থামায়। মোটর সাইকেল থামানোর পরপরই শাহীন প্রকাশ ডাকাত লালু সহ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে এবং আব্দুল্লাহ-আল-মামুন’কে টেনে হিছড়ে নিয়ে যায় এবং আব্দুল্লাহ-আল-মামুন এর মোবাইল ফোনটি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহেদ’কে বুঝিয়ে দেয়। তখন গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহেদ ১ লক্ষ টাকা কতিপয় সন্ত্রাসী’কে প্রদান করে মোঃ শাহেদ মোটর সাইকেলটি চালিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। কিছুদূর আসার পর তার কাছে থাকা নিহত বন্ধু আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের মোবাইল ফোনটি ইট দিয়ে ভেঙে চুরমার করে পাশের ডোবায় পানিতে ফেলে দেয়। তারপর সে মোটর সাইকেল চালিয়ে কলঘর নামক স্থানে পৌঁছালে জ্বালানী না থাকার কারণে মোটর সাইকেলটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন মোটর সাইকেলটি কলঘর বাজারে একটি দোকানের সামনে রেখে সিএনজিযোগে কক্সবাজারের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় তার বোনের বাসায় চলে আসে এবং বাসায় এসে মোঃ শাহেদ তার মোবাইলের ইমুর মাধ্যমে তার নিয়োজিত সন্ত্রাসীর মোবাইলের ইমুতে ফোন করে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন এর বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায় যে, আব্দুল্লাহ-আল-মামুন’কে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে রেললাইনের পার্শ্বে ফেলে রাখা হয়েছে।

মেজর শরীফুল আহসান আরো জানান, উক্ত হত্যাকান্ডের মুল পরিকল্পনাকারি শাহেদ ঘটনা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মামুনের প্রাক্তন স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের উপরও। তবে শেষ রক্ষা হয়নি শাহেদের। পরে র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে হত্যার সাথে জড়িত শাহেদ।

এক বন্ধুকে অপর বন্ধুর এমন হত্যার ঘটনা নাড়া দিয়ে উঠেছে সর্বত্রে, তাই দ্রুত সুষ্ঠু বিচার বিচারের প্রত্যাশা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *