ফেনীতে কমতে শুরু করেছে বানের পানি
বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরী, কহুয়া ও ছিলোনিয়া নদীর পানি।
তবে পানিবন্দি রয়েছেন উপজেলার এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ। ফেনী পৌর শহরের দু-তিনটি সড়ক ও বাসা বাড়িতে পানি কমলেও এখনো অনেক সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের নিচতলা পানিতে সয়লাব।
ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায়। বন্যা এখানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখানে এখনো পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ।
বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ফেনীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি স্লুইসগেট ও নোয়াখালীর মুছাপুরের ১৭টি স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। এ মুহূর্তে ফেনীতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় জরুরিভাবে ব্যবস্থা না হলে এখানে গুরুতর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
গত রোববার (২৫ আগস্ট) থেকে ফেনী শহরের বিদ্যুতের ৯টি লাইন সচল হয়েছে। গত ৪দিন ধরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর রোববার বিকেল থেকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ফেনীতে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডুবুরি দলসহ বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী টিম ফেনীর পরশুরাম ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চলমান রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থানীয়ভাবে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক সংগঠন, মানবিক সংগঠন তথা বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন জনগণের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় জেলার ১টি ও ছয়টি উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে। জেলা শহরে এসব বেসরকারি হাসপাতালসমূহ হলো- কনসেপ্ট হাসপাতাল, মেডিনোভা হাসপাতাল মেডিল্যাব, আল আকসা হাসপাতাল, জেড ইউ মডেল হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্যা কবলিত মানুষজনদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জেলায় ৮ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট লোকজন বিভিন্ন উপজেলায় উঁচু ভবনে বা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
একই সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ৩৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের সহযোগিতা ও উদ্ধারকাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ ও আপামর জনগণের সহযোগিতা পেলে সুন্দরভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এ দুর্যোগময় মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের প্রতি মানবিক হতে আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আপনার দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করবেন না।
শনিবার (২৪ আগস্ট) ফেনীতে সফরকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেন, সারা দেশ এখন বন্যা মোকাবিলায় নজর দিয়েছে। প্রথমে মানুষের জীবন বাঁচাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জনগণই প্রত্যেকে প্রত্যেককে রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ আগস্ট থেকে অতিভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ফেনী জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রথম দফা, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় দফা ও ২০ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা বন্যায় কবলিত হয় এসব উপজেলার মানুষজন।