ফের চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, সেপ্টেম্বরে বাড়তে পারে ভয়াবহতা
নানা সংকটময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সংকটময় পরিস্থিতিতে সারাদেশের সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ জনপ্রতিনিধিরা অনুপস্থিত।
ফলে মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ থমকে রয়েছে।
অপরদিকে স্বাস্থ্য খাতেও চলছে বিভিন্ন অস্থিরতা। এ অবস্থায় সেপ্টেম্বর মাসে দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসে সবসময় ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। গত জুলাই মাস থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তাল। সরকার পতনের পর থেকে দেশের বেশিরভাগ স্থানের জনপ্রতিনিধিরা অনুপস্থিত। ফলে মশক নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। যার কারণে এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে। অন্যদিকে দেশে এখনও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করে বল যায়, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর সংক্রমণের বড় ঝুঁকি আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, শনিবার (৩১ আগস্ট) গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সারা দেশে ৩৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে ৬১.৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮.৭ শতাংশ মহিলা রয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩ জন।
চলতি বছরে ৩১ জুলাই পর্যন্ত গত সাত মাসে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ছয় হাজার ৩২০ জন এবং একই সময়ে মারা গিয়েছিল ৫৬ জন। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের অর্ধেক আগস্ট মাসেই হয়েছে। অন্যদিকে মোট মৃত্যুর অর্ধেক আগস্ট মাসেই হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। দ্রুত রাজধানীসহ সারাদেশের ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংস করতে হবে। জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে, মনিটরিং বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মশা নিধন কার্যক্রম জোরালো করতে হবে। তা না হলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাস ডেঙ্গুর বড় ঝুঁকিতে পড়বে দেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ না নিলে সামনের দুই মাসে আরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে এবং বাড়তে পারে মৃত্যুও।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গবেষণা অনুযায়ী আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। এ প্রকোপটা ভালোই থাকবে। এখন যদিও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে আগামীতে এটা আরও বাড়বে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের যে কার্যক্রম সেটা আমাদেরকে আরও বেশি বেগবান করতে হবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বর্তমান পরিস্থিতিতে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে মশা নিধন কার্যক্রম না থাকার কারণেই হয়তো ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন বেড়েছে। বিভিন্ন সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাতে যারা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিক কাজগুলো করছেন। তাদের সেই অগ্রাধিকার ভিত্তিক কাজের তালিকায় যেন ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রমটাও যেন থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।