বগুড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ১০১ জনের নামে হত্যা মামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বগুড়ায় এক স্কুলশিক্ষককে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত স্কুলশিক্ষক সেলিম হোসেনের বাবা সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবির আন্দোলনের দিন বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় শিক্ষক সেলিম হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত সেলিম হোসেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের পালিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর হরিগাড়িতে তিনি বসবাস করতেন।
সেলিম হোসেন কাহালু উপজেলার মুরইল লাইট হাউজ স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
মামলার অন্য ৯৯ আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বগুড়া-৫ (ধুনট-শেরপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাগর কুমার রায়, এ কে এম আসাদুর রহমান দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান ববি, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান শাহীন, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতি আল রাজি জুয়েল ও নাঈমুর রাজ্জাক তিতাস, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মাশরাফি হিরো ও অসীম কুমার রায়, শহর আওয়ায়ী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলন, চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম রাজ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের হুকুমে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথা স্টেশন সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগের সাবেক ওই দুই সংসদ সদস্যসহ সাত নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে ককটেল ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় শিক্ষক সেলিম হোসেন গুরুতর আহত হন।
বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার ও আমিনুল ইসলাম রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং কাউন্সিলর আরিফুর রহমান হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করে। পরে অন্য হামলাকারীরা তাকে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে চলে যায়।
মামলার আইন সহায়তাকারী বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেদ বলেন, ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে ওই দুজনকে হুকুমদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।