বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না: চসিক মেয়র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী৷
রোববার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিতে।
তাঁর জন্ম না হলে এই জাতিকে এক করে যুদ্ধের ময়দানে নেওয়া যেতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্মের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনার জন্ম বাস্তবে রূপায়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, যাতে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করে এই দেশটির স্বাধীনতা এসেছে।
‘ভেতো বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে যোগ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। দুর্বল বাঙালিরা একেকজন পরিণত হয়েছিল স্বাধীনতার লড়াকু সেনায়। ছাত্র অবস্থায় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে গিয়াছিলাম কেবল জাতির পিতার ডাকে। অনেক সহযোদ্ধার প্রাণ গেছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় লড়াই চালিয়ে গেছি, এনেছি স্বাধীনতা’।
মুক্তিযুদ্ধে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা স্মরণ করে রণাঙ্গনের এ যোদ্ধা বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের রক্তচক্ষুর মাঝেই প্রগতিশীল ছাত্রদের নিয়ে নিউক্লিয়াস নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন৷ এ সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য গোপনে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকেন স্বাধীনতাকামীরা। নিউক্লিয়াসের গবেষণা সেল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে মানুষের কাছে নিয়ে যায়৷ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে সেসময় নিউক্লিয়াসের স্লোগান ছিল ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার দেশ, আমার দেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছোট করে দেখাতে ইতিহাস বিকৃতির অনেক অপচেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু ইতিহাস তার আপন গতিতে উদ্ভাসিত হয়েছে৷ এজন্য শিশুদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে, তাদের গড়তে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে৷ রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে রাখতে হবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে৷
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শিশুদের হৃদয়ে লালনের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। তোমাদের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত লড়াই সম্পন্ন হবে, গড়ে উঠবে স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে তবে মুক্তির যুদ্ধ আজো শেষ হয়নি। সাম্য ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে আমরা যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হই, সে যুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ আমাদের বুকে ধারণ করতে হবে, লড়তে হবে সে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য।
সভাপতির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা শিশু দিবস পালন করছি৷ আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিশুবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে চাই৷
দিবসটি উপলক্ষে মেয়রের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সভায় বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর ও চসিকের সমাজকল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. আবদুস সালাম মাসুম, জহর লাল হাজারি, হাসান মুরাদ বিপ্লব, শৈবাল দাশ সুমন, আবুল হাসনাত মো. বেলাল, আতাউল্লা চৌধুরী, গোলাম মো. জোবায়ের, নুরুল আমিন।
উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আনজুমান আরা, রুমকি সেনগুপ্ত, ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান হিসারক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানাসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানবৃন্দ, চসিকের উপ-সচিব আশেকে রাসুল টিপু, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সিবিএ নেতৃবৃন্দ এবং চসিক পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা৷
সভা শেষে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়৷ এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ‘দেশ একটি সম্মিলিত উচ্চারণ’ এর উদ্যোগে পবিত্র ইসলাম ধর্মের জন্মকথা, মুসলিম উম্মাহ ও বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন মেয়র৷ প্রদর্শনীটি ২৬ মার্চ পর্যন্ত লালদিঘি মাঠে চলবে৷