দেশজুড়ে

‘বিদ্যুৎ যায় না, বরং মাঝে মধ্যে আসে’

সুনামগঞ্জে গ্রামের মানুষের লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি যেন লাগামহীন। গেল দুইদিন ধরে দিনে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে এই জেলার গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের। তারা বলছেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ যায় না, বরং মাঝে মধ্যে আসে।

সুনামগঞ্জে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছেন সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এ অবস্থায় বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, চাহিদার চেয়ে কম পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিচ্ছেন তারা।

প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে সুনামগঞ্জে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছেই। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও বার বার এমনটি হওয়ায় বিদ্যুৎ সেবার ওপর মানুষ দিন দিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন। দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল গ্রাহকরা খুব কষ্টে সময় পার করছেন।

এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। প্রচণ্ড দাবদাহ আর দিনের বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বেচা-বিক্রি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় উপজেলাজুড়ে বারবার লোডশেডিং চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ।

সুনামগঞ্জ শহর ও শহরতলিতে বিদ্যুতের চাহিদা আছে ১২ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড লাইন থেকে সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগ পেয়েছে আট মেগাওয়াট। এ অবস্থায় শহরের সাতটি ফিডারে এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং করতে হচ্ছে। শহরবাসী দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছেন।

শহরতলীর বড়পাড়া এলাকায় গ্রাহক বাবলু ঢাকা পোস্টকে জানান, বিদ্যুৎ অফিস লোডশেডিংয়েন যে সময়সূচি দিয়েছে, তার বাইরেও ১-২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এমন অবস্থায় বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি কষ্টে আছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ডুংরিয়া গ্রামের মুসা মিয়া জানান, শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। পরে কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ পেলেও রাত আড়াইটা থেকে আবার ভোর ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিলেন তারা।

লালপুর গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক খলিলুর মিয়া বলেন, লোডশেডিংয়ে আমাদের গ্রামের লোকজন অসহ্য হয়ে উঠেছেন। শহরে তো তাও আমাদের থেকে ভালো। আমাদের এখানে টানা ৩-৪ ঘণ্টাই লোডশেডিং চলে।

শহরতলির গৌরারং গ্রামের নানু দাস বলেন, গত শনিবার সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। বিকেল ৫টায় বিদ্যুৎ এলেও এক ঘণ্টা থাকার পর আবার দুই ঘণ্টা ছিল না। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকার পরেও লোডশেডিং কেন করছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলেন, ৭-৮ দিন ধরে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। দিনে ৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন লোডশেডিং আগে কখনও দেখিনি। বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগান্তিতে আছেন। শুধু লোডশেডিং না, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলেও অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাতটি ফিডার কাজে লাগানো হয়। এগুলো হচ্ছে, বেতগঞ্জ, হাছনগর, থানা, আমবাড়ী, মল্লিকপুর, বড়পাড়া ও দিরাই ফিডার। এক ঘণ্টা পরপর প্রতি ফিডারে লোডশেড করা হচ্ছে।

এছাড়া তাদের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকরা অসহ্য যন্ত্রণায় পড়েছেন তা আমরাও বুঝতে পারছি। কিন্তু করার মতো কিছুই নেই। নির্দেশনার বাইরে লোড নিতে চাইলে যে কোনো প্লান্টে বিপর্যয় হতে পারে এবং তাতে সারা দেশ ব্ল্যাক আউট হয়ে যেতে পারে। তখন পুরো দায় যারা নির্দেশনা মানেনি তাদের ওপর বর্তাবে।

সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জিএম মিলন কুমার কুন্ডু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ৫১ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ মেগাওয়াট। গরম বেশি পড়ায় চাহিদা বেড়েছে। এই অবস্থায় শীত মৌসুমের আগ পর্যন্ত কিছুটা ভোগান্তি থাকবে।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু নুয়মান বলেন, উৎপাদন কমেছে আর চাহিদা বেড়েছে। এই অবস্থায় লোডশেডিং করা ছাড়া উপায় নেই। সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ১২ মেগাওয়াট চাহিদা আছে। অথচ সাত-আট মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *