চট্টগ্রাম

ভুয়া বিলে রেলের কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর পাহাড়তলী থেকে পণ্য কেনার জন্য কোনো ধরনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। কেনাকাটা হয়নি কোনো পণ্য। কিন্তু পণ্য কেনাকাটা হয়েছে বলে ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। টেন্ডার ছাড়া ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি জানাজানির পর পূর্বাঞ্চল রেলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এই ঘটনায় গতকাল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব এবং অডিট শাখার ৭ কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান। এই ঘটনার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় যাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন হিসাব কর্মকর্তা (এমটিএ) মামুন হোসেন, হিসাব কর্মকর্তা (প্রশাসন টিএ) মো. আবু নাছের, হিসাব রক্ষক শিমুল বেগম, হিসাব রক্ষক (প্রশাসন ও সংস্থাপন) সৈয়দ সাইফুর রহমান, অডিটর (ডিএফএ পদ্ধতি) পবন কুমার পালিত, জুনিয়র অডিটর (ডিএফএ) ইকবাল মো. রেজাউল করিম এবং অফিস সহায়ক মাকসুদুর রহমান।

ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার জানতে পারে। ভুয়া বিলের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশের পর কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যায়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, পাহাড়তলী স্টোরস শাখা থেকে কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। কেনা হয়নি কোনো পণ্যও। বিল পরিশোধ করার জন্য দেয়া হয়নি কোনো চিঠি। সম্পূর্ণ ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে হিসাব ও অডিট শাখার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের যোগসাজশে ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে রেলওয়ের নাবিল আহসান চৌধুরীর কসমোপলিটন কর্পোরেশন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার)।

যাচাই–বাছাই, চেক হস্তান্তর, ব্যাংকে জমাদান এবং উত্তোলনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তর (এফএঅ্যান্ডসিএও)। এসব ভুয়া বিল ও ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রেলওয়ের হিসাব ও অডিট শাখার কয়েকজনসহ একটি প্রতারক চক্র জড়িত বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে শনাক্ত করেছে রেলওয়ের হিসাব বিভাগ। আর এ কাজে রেলের হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যাংকের কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খান বলেন, এই ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা (ডিএফএ) জয়শ্রী মজুমদারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছি। কিন্তু যে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংক, তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। তদন্ত কমিটি আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংকে গিয়েছিল। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ ছাড়া কোনো তথ্য দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। আমরা ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়ে (কারা সীমান্ত ব্যাংকে হিসেব খুলেছে) চিঠি লিখেছি।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তের আগে কারা জড়িত এই ব্যাপারে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ২ জন অফিসার, ২ জন একাউন্টেন্ট, ২ জন অডিটর এবং ১ জন এমএলএসকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, কসমোপলিটন কর্পোরেশনের চারটি বিল ছিল, সেখানে একটি বিলের বিপরীতে দুইবার অর্থ ছাড় নিয়ে গেছে।

টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে মো. রফিকুল বারী খান বলেন, কসমোপলিটন কর্পোরেশনের মালিক দাবি করছেন বিলটি তারা দেননি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আগ্রাবাদ সীমান্ত ব্যাংকে কারা একাউন্ট খুলেছে, কারা চেক জমা করেছে, কারা টাকাগুলো উত্তোলন করেছে, সেই তথ্য চেয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি টাকা ছাড়ের আগে ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোন দেওয়া হয়েছিল কিনা সেই বিষয়টিও আমরা দেখছি। কসমোপলিটন কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে আমার অফিসের কেউ জড়িত নেই। এই প্রক্রিয়ার সাথে হিসাব শাখা, অডিট শাখা, স্টোরস এবং ডেসপাস শাখার কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে সব ধরনের কেনাকাটা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে করা হয়। রেলওয়ের সব বিভাগ তাদের চাহিদা পাঠানোর পর পণ্য ক্রয় করে স্টোরে জমা রাখা হয়।

সংশ্ল্লিষ্ট শাখা থেকে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বিল পাঠানো হয় বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে সব ধরনের যাচাই–বাছাই শেষে এফএঅ্যান্ডসিএও অনুমোদনের পর চেক ইস্যু করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *