মাসুদের পরিবারের জন্য সহায়তা চেয়েছে আ. লীগ, উঠেছে প্রশ্ন
মারধরের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নিহত আবদুল্লাহ আল মাসুদের পরিবারের জন্য দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে আওয়ামী লীগ৷
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ সহযোগিতা চেয়ে আহ্বান জানানো হয়৷
এতে মাসুদের স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান।
সেখানে মোসা: বিউটি য়ারা বেগমের নামে সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০২০০০২২৬৬৩৫০১, অগ্রণী ব্যাংক, বিনোদপুর শাখা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ; রাউটিং নম্বর: ০১০৭০০১৯০ এবং বিকাশ/নগদ: ০১৭৮৪৫৫৮৩৭০ দিয়ে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি মাসুদের সহধর্মিনীর নামে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ দলের অঙ্গ-সংগঠনের একজন কর্মী হামলায় নিহতের পর তাকে সহায়তা করার জন্য পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, দলের কেউ তার পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেন?
আর্থিক সহায়তা চেয়ে সন্ধ্যার দিকে ফেসবুকে এই পোস্ট দেওয়া হলে রাত ১টা পর্যন্ত চার হাজার ৮শ’র বেশি মন্তব্য পড়েছে।
অনেকে শেয়ার করেছেন সেই পোস্ট। মেহেদী হাসান রুবেল নামে একজন মন্ত্রব্যের ঘরে লিখেছেন, গত ১৬ বছর বিরোধী দলে থেকেও জামায়াত-বিএনপি তাদের কোনো কর্মীর জন্য মনে হয় এভাবে বিকাশ নাম্বার দিয়ে সাহায্য চায়নি। ১৬ বছর সরকারে থেকে একেকজন নেতা হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার পরও একজন কর্মীর জন্য যদি বিকাশ নাম্বার দিয়ে সাহায্য চাওয়া লাগে, তাহলে এর চেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত আর হতে পারে না।
মোস্তফা কামাল নামে একজন লিখেছেন, আজকে কেন ফেসবুকে ভিক্ষা চাইতে হয়। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়েছে তারা কোথায়? তৃণমূল নেতাকর্মীদের সহায়তা করুন তা না হয় আওয়ামীলীগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ফেসবুকে অনেকে পোস্ট দিয়ে তার পরিবার এবং পাঁচ দিনের ছোট শিশুর পাশে থাকার কথা জানিয়ে মোবাইলে টাকা পাঠানোর রশিদের ছবিও শেয়ার করেছেন।
আবদুল্লাহ আল মাসুদের ওপর ৭ সেপ্টেম্বর হামলা চালিয়ে ও মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। হামলায় মারাত্মকভাবে আহত মাসুদকে কেউ একজন মতিহার থানায় নিয়ে তার নামে কোনো মামলা আছে কি না জানতে চান। সেখানে তার নামে মামলা না থাকায় নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নেওয়া হয়। বোয়ালিয়া থানায় থাকা অবস্থায় অবস্থা গুরুতর হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে তার মৃত্যু হয়।
মারধরের পর বোয়ালিয়া থানায় নেওয়া হলে মাসুদ পানি চেয়েছিলেন, শোয়া থাকা অবস্থায় সেই ভিডিও অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই। ’
আবদুল্লাহ আল মাসুদ ছাত্রজীবনে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। রাজশাহী নগরের বুধপাড়ার বাসিন্দা মাসুদ ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন। এতে তার ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল তার হাতের রগ। ছাত্রশিবিরের সদস্যরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ হামলায় পা হারিয়ে মাসুদ একটি প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। সবশেষ হামলায় তার অন্য পা ভেঙে দেওয়া হয়।
বেকার জীবনের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাবির উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে তাকে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি।
৩ সেপ্টেম্বর কন্যাসন্তানের বাবা হন মাসুদ। সেই নবজাতক শিশুর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মাসুদ লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩/৯/২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সকল আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধুবান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।