কক্সবাজারচট্টগ্রাম

মিয়ানমার সীমান্তে ফের গুলির শব্দ, রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা

কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপার থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত বাংলাদেশি জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা।

সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাখাইনের মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত বেড়েছে। এজন্যই গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ এত বেশি শোনা যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও শনিবার থেকে আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। এতে দ্বীপবাসীর মনে আতঙ্ক কাটলেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ইনানী-সেন্টমার্টিন নৌরুটে দুই পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, বৃহস্পতি থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় থেমে থেমে ব্যাপক গুলি ও মর্টারশেলসহ ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। রোববার গোলাগুলির তীব্রতা কিছুটা কম ছিল। আজ ভোর থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পরপর ১/২টি গুলির শব্দ ভেসে আসছে। খবর পাচ্ছি, মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় সরকারি বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে।

আব্দুস সালামের মতে, ওই এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গারা বসবাস করেন। সংঘাতে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটছে বলে জানা গেছে। অনেকে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া নদী ও খালে অবস্থান নিয়েছে। তার আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে আবার নাফ নদী দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে।

টেকনাফের সর্বদক্ষিণের শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন জানান, ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে এলাকা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও শনি ও রোববার গুলির শব্দ কিছুটা কম শোনা যায়। এতে দ্বীপবাসীর মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কমেছিল। তবে সোমবার ভোর থেকে আবারও তীব্র গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

কক্সবাজারের টেকনাফের কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার এইচ এম লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নাফ নদীর সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। দালাল চক্র যেন সক্রিয় হতে না পারে, সে কারণে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলে সমিতির সভাপতিদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কাউকে যেন এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে দেখা না যায়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এক দিন শান্ত থাকার পর আজ সকাল থেকে আবার বিকট শব্দে টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে উঠছে। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত থাকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তমব্রু ও বাঁইশফাড়ি এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *