দেশজুড়ে

যে গ্রামের নাম শুনলে মেলে না চাকরি, বিয়ে যায় ভেঙে

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থান রাইগ্রামের। কিন্তু এই গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমছে না। তাদের ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে মাদকের অভিশপ্ত থাবা।

তার কারন, মাদকের অভিশপ্ত থাবাতে রাইগ্রাম পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘হেরোইন পল্লী’ নামে। আর সাধারণ বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মাদকের কুখ্যাতির কারণে। এতে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের। রাইগ্রামের নাম শুনলেই ভেঙে যায় বিয়ে। কারণ কেউ সন্তানদের এ গ্রামের কারোর সঙ্গে বিয়ে দিতে চান না। গ্রামের তরুণদের চাকরি পেতেও যেন ভোগান্তির শেষ নেই।

মাদক নির্মূলে গ্রামে কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। সেই কমিটির উদ্যোগে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাইগ্রামের চারমাথা মোড়ের বটতলায় মাদকবিরোধী মতবিনিময় সভা হয়েছে। সেখানে নানান বিষয়ে কথা বলেন গ্রামবাসীরা। তারা তাদের ভোগান্তি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন, পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি মতিন মোহাম্মদ। আরো বক্তব্য রাখেন, পলাশবাড়ী পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি তাজুল ইসলাম মিলন, রাইগ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, সোহান মিয়া, সাদ্দাম হোসেন। সভা সঞ্চালনা করেন মো. গোলজার রহমান।

সভায় গ্রামের নাম দিয়ে নিজেদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন স্থানীয়রা। তাদেরই একজন এসহাক আলী (৫৫)। তিনি রিকশাভ্যান-ইজিবাইক মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দাম্পত্য জীবনে চার ছেলে-মেয়ের জনক তিনি। ছোট মেয়ে মাসুদা আক্তারের বিয়ে দিতে পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে।

গেল ১৫ আগস্ট মেয়ের সম্পন্ন হলেও এর আগে বিয়ে ভেঙেছে বহুবার। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। ফলে আর সবার মতো আমাকেও এমন বিপাকে পড়তে হয়েছিল।

শত চেষ্টার পর সম্প্রতি মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরেছেন বলে জানালেন এসহাক। বর হেলাল মিয়া গার্মেন্টে চাকরি করেন, বাড়ি জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তুলনামূলক কম হলেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে অপর সন্তানদের ক্ষেত্রেও।

একই গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে বাসিন্দা ইব্রাহিম মিয়া (৩৮) তার জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তিনি পেশায় একজন গাড়িচালক। সম্প্রতি অরিন পরিবহনে চালকের চাকরির জন্য কোম্পানির কার্যালয়ে যান। এসময় কর্তৃপক্ষ তার লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু যখন বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেন, ঠিক তখনই শুধু হয় বিপত্তি। তিনি গাড়ি চালানোর ফাঁকে মাদক পরিবহন করবেন সন্দেহে নিয়োগ বঞ্চিত করা হয়।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, হিরোইন গ্রামের খ্যাতি পাওয়া এমন নামের কারণে কম-বেশি তাদের নানান ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী দ্রুত এমন সমস্যা থেকে মুক্তি চান। পাশাপাশি তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে সবাই এক হয়ে কাজ করতে চান।

সভা শেষে গ্রামটি মাদকমুক্ত করতে কমিটি গঠনসহ নানামুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের মে মাসে রাইগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে মাদক সম্রাট রাজু মিয়া র‌্যাবের সাথে গুলিবিনিময়কালে নিহত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযোগে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি আটক হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *