রামু সরকারি কলেজ : শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে ফের ক্লাস শুরু, ছুটিতে অধ্যক্ষ
রামু সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে একদিন বন্ধ থাকার পর সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে পুনরায় সব শ্রেণির ক্লাস চালু করা হয়েছে। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমকে পদত্যাগের জন্য বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হয়রানি এবং নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণের একদফা দাবিতে সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৭ আগস্ট থেকে কলেজ খোলা থাকলেও অধ্যক্ষ কলেজে আসছেন না। এমনকি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্বও দেননি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এমদাদ হোসেন জানান, আজও আমরা পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজে বিক্ষোভ করেছি। আজ থেকে সব শ্রেণির ক্লাস চালু হয়েছে।
শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনুরোধে অধ্যক্ষের পদত্যাগের জন্য বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে পদত্যাগ না করলে আমরা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলানোসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা শিক্ষকেরা বসেছিলাম। সেখান থেকে ভিডিও কলে অধ্যক্ষকে সার্বিক বিষয়ে জানানো হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঈনুল হাসান জিহাদ ও সাজিদ জানান, অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম কলেজে বছরের পর বছর নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে গেলেও তাকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন পাঁচ-ছয়জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে সুপ্রতীম বড়ুয়া অন্যতম।
এছাড়া জ্যেষ্ঠতার কারণে সুপ্রতীম বড়ুয়া বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের সুযোগে অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি এবং নানা অনিয়ম দুর্নীতি থেকে বাঁচাতে সহযোগিতা করেন তিনি। আমরা তার এসব অনিয়মও প্রতিহত করবো।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজে অনুপস্থিত মুজিবুল আলম। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৭ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত একদিনও কলেজে আসেননি তিনি। এরমধ্যে সোমবার (১২ আগস্ট) সুপ্রতীম বড়ুয়াকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলা হলেও তিনি কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি। অধ্যক্ষ দিনের পর দিন কলেজে অনুপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে সুপ্রতীম বড়ুয়ার আচরণ রহস্যজনক।
দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে শুধু সোমবার (১২ আগস্ট) একদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিনগুলোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ওইদিন অধ্যক্ষ চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদন করেন। তা গৃহীত হয়েছে।
তবে কত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে জানতে চাইলে সুপ্রতীম বড়ুয়া বলেন, আবেদনে ঠিক কতদিনের ছুটি তা উল্লেখ নাই। এটা ১৫ দিন হতে পারে, এক মাস অথবা ছয় মাসও হতে পারে। দরখাস্তের কপিটি দেখানোর কথা বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
এছাড়াও আন্দোলনের সার্বিক বিষয়ে অধ্যক্ষকে অবহিত করার কথা জানিয়ে সুপ্রতীম বড়ুয়া বলেন, তিনি (অধ্যক্ষ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এদিকে ছুটির আবেদনের বিষয়ে কলেজের অফিস সহকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, আবেদনের একটি কপি তার হাতে আছে। সেখানে ১১ আগস্ট থেকে সাতদিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি, পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-মামলার হুমকি, নানাভাবে হয়রানিসহ ভুয়া প্রকল্প ও অনুষ্ঠানের নামে কলেজ ফান্ডের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, নিজের শিক্ষককে নাম ধরে ডাকাসহ অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে গত সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে অধ্যক্ষের অপসারণে একদফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।