চট্টগ্রাম

সম্প্রসারণে সৌন্দর্যহানি ফইল্যাতলি আধুনিক কিচেন মার্কেটের

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত অত্যাধুনিক কিচেন মার্কেট উদ্বোধনের আগেই শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটিকে। দোকান বরাদ্দ নিয়ে নতুন ও পুরাতন ব্যবসায়ীদের জটিলতা নিরসনে চসিকের উদ্যোগে মার্কেটের পশ্চিমে পাশ বর্ধিত করে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন নতুন স্থাপনা। পুরোনো অবকাঠামো ঠিক রাখা হলেও নতুন স্থাপনা নির্মাণের কারণে সৌন্দর্য হারাবে আধুনিক এই মার্কেটটি। অথচ নবনির্মিত এই মার্কেটের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নজর কেড়েছিল নগরীর বাসিন্দাদের।

সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষে আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দুই বছর পর বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নে মিউনিসিপাল গভর্নেন্স এন্ড সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এ মার্কেটটি বুঝে নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এরপর দোকান বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে চসিকের দ্বন্দ্বে দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও চালু করা যায়নি এই আধুনিক মার্কেটটি।

পুরাতন ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপে জানা গেছে, মার্কেট নির্মাণ শুরুর আগে তাদেরকে মহেশ খালের পাড়ে অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে ব্যবসার সুযোগ দিয়েছিল চসিক। যে মার্কেটটি এখনও চালু আছে। সে সময় চসিকের সাথে পুরাতন ব্যবসায়ীদের একটা চুক্তিও হয়। কিন্তু নতুন মার্কেট নির্মাণের পর তাদের সাথে আলাপ না করেই সাবেক এস্টেট অফিসার বেশকিছু দোকান নতুন ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় পুরাতন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ ছিল মেয়রকে ভুল বুঝিয়ে পুরোনোদের জন্য পর্যাপ্ত দোকান না রেখে বহিরাগতদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে ফেলেছেন তৎকালীন এস্টেট অফিসার। এসময় নতুনদের দিয়ে মার্কেট উদ্বোধনের চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু পুরোনোদের বাধায় শুরু করা যায়নি নতুন মার্কেটের কার্যক্রম।
এরপর সংকট নিরসনে মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিমের নির্দেশে বর্তমান এস্টেট অফিসার মো. রেজাউল করিম দুই পক্ষের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। পরবর্তীতে দুই পক্ষকে দোকান বরাদ্দ দিতে গিয়ে জায়গা সংকটে পড়ে চসিক। পুরাতন ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারে তাদের ৯০টি দোকান এবং ১০৮ স্টল রয়েছে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে এসব দোকান ও স্টল বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়ার পর দুই ফ্লোরের পুরাতন ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সমস্যা সমাধানে মার্কেটের কিছু সুযোগ সুবিধা সীমিত করে এবং প্রথম ফ্লোরে ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত স্থাপনায় অতিরিক্ত কিছু দোকান তৈরি করে চসিক। এরপরও পর্যাপ্ত দোকান প্রস্তুত করা যায়নি। এরপর বর্তমানে দু’পক্ষের সমঝোতায় মার্কেটের বাইরে শুধুমাত্র কাঁচাবাজারের জন্য অতিরিক্ত স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করেছে চসিক। যাতে ৪০টির মতো স্টল হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক মার্কেটে সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে এ মার্কেটটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু আলাদা স্থাপনা নির্মাণে বাজার ব্যবস্থাপনায় লেজেগোবরে অবস্থা হবে। পাশাপাশি স্থাপনাটি তার স্বকীয়তা হারাবে।

পুরাতন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সাবেক এস্টেট অফিসার প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে গোপনে দোকান বরাদ্দ দিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। এখন পুরাতন ব্যবসায়ীদের দোকান বুঝিয়ে দিতে স্থাপনা বাড়িয়ে নতুন দোকান সৃষ্টি করতে হচ্ছে। দোকান বরাদ্দ না পেলে এখানকার প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা বর্ধিত অংশে দোকান নিতে রাজি হয়েছি।

এদিকে নতুন ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেয়ার পর নতুন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল চসিক। ঐ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রায়হান বলেন, বিগত একবছরেরও বেশি সময় আগে বরাদ্দ পেলেও এখনও দোকান চালু করতে পারিনি। চসিককে নিয়মিত ভাড়াও পরিশোধ করে আসছি। আমরা কোন দ্বন্দ্ব চাই না। নতুন পুরাতন সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে ফইল্যাতলি বাজারের অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্যবসা করতে চাই।

নতুন স্থাপনা তৈরি হলেও তাতে মার্কেটের স্থাপনায় তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন, চসিকের বর্তমান এস্টেট অফিসার মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, মেয়রের নির্দেশে বাজারটি চালু করতে ব্যবসায়ীদের সাথে গত কয়েকমাসে ৪০টির মতো সভা করেছি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যাতে মার্কেটটি চালু করা যায়। পুরোনো ব্যবসায়ীদের দাবি মেটাতে যে পরিমাণ দোকান প্রয়োজন তা প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে নেই। এছাড়া তৃতীয় তলায় জায়গা থাকলেও ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে রাজি হচ্ছেন না। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় মার্কেটের পশ্চিম পাশে কাঁচাবাজারের জন্য আলাদা স্টল তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি।

জানা গেছে, নান্দনিক এই স্থাপনা সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেয়নি চসিক। সিডিএ এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস পূর্বকোণকে বলেন, ‘চসিকের পক্ষ থেকে ফইল্যাতলি বাজার কিচেন মার্কেটের পাশে নতুন স্থাপনা সম্প্রসারণে জন্য কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। নগরীতে যে কোন স্থাপনা সম্প্রসারণ বা পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই সিডিএ’র অনুমোদন নিতে হবে।’

অথচ চসিক অনুমোদন না নিয়েই মার্কেট সম্প্রসারণ করছে এবং এর মধ্যে সম্প্রসারিত অংশসহ পুরো মার্কেটে পুরাতন ব্যবসায়ীদের দোকান ও স্টল বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এস্টেট অফিসার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে নীচতলায় ২৫টি মুদি দোকান ও ৮৩টি স্টল, দ্বিতীয় তলায় ৪০টি দোকান ও ১৭টি স্টল এবং তৃতীয় তলায় ৪৬টি দোকান বরাদ্দের জন্য পুরোনো ব্যবসায়ীদের পে-অর্ডার জমা দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৩ মার্চ লটারির মাধ্যমে এসব দোকান বরাদ্দ দেবে চসিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *