চট্টগ্রামসাতকানিয়া

সাতকানিয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজনের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে খাগরিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সাথে অসদাচরণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের নিয়মিত ক্লাসে অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলে ধরেন, যা তাদের শিক্ষার মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে তারা মনে করেন।

শিক্ষার্থীরা “প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চাই” স্লোগান দিয়ে তাঁদের দাবির পক্ষে ব্যানার প্রদর্শন করেন। তারা দ্রুত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে জানান, অন্যথায় তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।

এদিকে, প্রধান শিক্ষক এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করেননি।

এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদকে স্থানীয় জনগণও সমর্থন জানিয়েছেন।

এর আগে ২০২২ সালে জসিম উদ্দিন নামে এক অভিভাবক প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নথির তথ্য সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের নামে ঘুষ আদায়, শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম না মেনেই শিক্ষার্থীদের টিসি প্রদান, সনদসহ বিদ্যালয় থেকে নথি সংগ্রহে এলেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, খাগরিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আকতার হোসেনের যোগসাজশে প্রধান শিক্ষক এসব অনিয়ম করছেন।

অভিযোগকারী অভিভাবক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন এ বিদ্যালয়কে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। তিনি সনদ উত্তোলন, প্রত্যয়নপত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা কোনো নথির তথ্য সংশোধনের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ঘুষ দিতে হয় বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

করোনার কারণে বার্ষিক পরীক্ষায় মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের পরও স্বাভাবিক সময়ে নেয়া ৮ থেকে ১১টি পরীক্ষার সমপরিমাণ ১৫০ টাকা করে পরীক্ষার ফি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ গত এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের এই অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-অবহেলার কারণে এ সময় তিনজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি বলেও লিখিত অভিযোগে বলা হয়।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ে যোগদানের দুই মাস আগে থেকেই বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন অনুপম মহাজন। সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিনদিন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন। সম্প্রতি এই বিদ্যালয়ের গভর্নিংবডির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। এ উপলক্ষে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারকে জীবিত দেখানো হয়েছে। আবার জীবিত অনেক ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে সেই সময় গণমাধ্যমকে সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক অনুপম মহাজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *