চট্টগ্রাম

সিআরবির শতবর্ষী গাছ রক্ষা ও উখিয়ায় বিট কর্মকর্তা হত্যার বিচার দাবি

চট্টগ্রামের টাইগারপাস সিআরবির শতবর্ষী গাছ রক্ষা এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় বন বিট কর্মকর্তা হত্যার বিচারের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় টাইগারপাস মোড়ের শতবর্ষজীবী গাছের নিচে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা’র) ব্যবস্থাপনায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

জুমাতুল বিদার ব্যস্ততার মাঝেও বীর চট্টলার নাগরিকবৃন্দ দুপুর আড়াইটা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হতে শুরু করেন।

ধরা চট্টগ্রামের সচিব কবি ও প্রাণপ্রকৃতি সম্পাদক শারুদ নিজামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রথমেই পরিবেশ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন অভি কিম্বেল ও তার দল। এতে গলা মিলিয়ে প্রতিজন নাগরিক সম্মতি প্রকাশ করেন। পরে মেজবাহ চৌধুরীর পরিবেশবাদী আবৃতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন হাসান মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর কারণ হচ্ছে গণহারে গাছ কাটা।

তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টাইগারপাসের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চট্টগ্রামের নাগরিকবৃন্দ প্রতিবাদ করেছেন। আজ সেই এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নামাতে গাছ কাটার মত সিদ্ধান্তকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি এবং প্রতিবাদ জানাই।

সরোয়ার আমিন বাবু বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই তবে তা হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। ছড়াকার ও কবি উত্তম কান্তি বড়ুয়া উনার প্রতিবাদি ছড়া আবৃতি করেন।

এডভোকেট কানিজ কাওসার রিমা বলেন, সৃষ্টিকর্তা চট্টগ্রামে এক অপূর্ব নেয়ামত হিসেবে এই সি আর বি এবং এর প্রকৃতিকে দান করেছেন। আমরা এর রক্ষায় প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।

চট্টগ্রাম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ইউনুস বলেন, সিআরবি হচ্ছে এই চট্টগ্রামের ফুসফুস। এই ফুসফুস রক্ষা করেও উন্নয়ন করা যায়। আমরা পরিবেশের সাথে সমন্বয় করেই উন্নয়ন চাই।

রেহানা রানু বলেন, এই গাছ এবং প্রকৃতি রক্ষায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি এবং হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সাংবাদিক আবসার মাহফুজ পূর্ববর্তী সিআরবি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট টেনে বলেন, আমরা চিন্তা করেছিলাম উক্ত আন্দোলনের পর আর কোন আন্দোলনে আমাদের দাঁড়াতে হবেনা। কিন্তু যেই সিডিএ এই শহরের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন করবে তারাই এর বিনাশে হাত দিয়েছে। আমরা এর প্রতবাদ এবং কক্সবাজারের বন কর্মকর্তা হত্যার বিচারের দাবি জানাই।

ক্যাডেট ফোরাম চট্টগ্রামের পক্ষে উক্ত আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ক্যাডেট ফোরামের সমন্বয়ক নিবিড় মাহমুদ।

কোহিনূর কামাল বলেন, শুধু শতবর্ষী গাছ কেন প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় যেকোন গাছকেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তিনি বলেন গাছ হচ্ছে আমাদের সন্তানতুল্য।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ইদ্রিস আলী বলেন, ৪৬টি গাছ কাটার মাধ্যমে বিলীন হওয়া অক্সিজেনের বিনিময়ে আমরা কোন উন্নয়ন চাইনা। ঐতিহ্যবাহী গাছের দিকে হাত না বাড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান বলেন, গাছ অক্সিজেন ছাড়ে প্রাণীরা তা গ্রহণ করে। এটি একটি ইকো সিস্টেম যা প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। বাংলাদেশে প্রাণীর তুলনায় গাছের সংখ্যা অপ্রতুল। তিনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ কাটার বিরোধিতা করেন এবং আরো আরো অনেক গাছ লাগানোর কথা বলেন।

ধরা চট্টগ্রামের আহবায়ক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, আজ আমরা ধরার আহবানে এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বিগত বছরের সিআরবি তে প্রকৃতি বিনাশ করে হাসপাতাল নির্মাণ বিরোধী আন্দোলনের কথা টেনে এনে বলেন আমরা সেই আন্দোলন সফল করেছি।

তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সিআরবিতে কোন র‍্যাম্প নির্মান হবে না এর বিকল্প স্থানে র‍্যাম্প নির্মান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং পাহাড় নিধনের বিপক্ষে। তবুও আমরা কেন এখানে দাঁড়ালাম। কারণ, আমরা ধরা চাই ৪৬টি কেন একটি গাছ ও কাটা যাবে না। যতক্ষণ না এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন ততক্ষণ অবধি আমরা এই প্রতিবাদ থেকে সরে আসবো না।

তিনি আন্দোলনে একাত্বতা ঘোষণাকারী প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানান। উক্ত আন্দোলনে প্রাণপ্রকৃতি, ক্যাডেট ফোরাম চট্টগ্রাম, লিও ক্লাব ইমপেরিয়াল সিটি, পরিবেশবাদী সংগঠনসহ আরো অনেক সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব একাত্বতা ঘোষণা করেন।

পরিশেষে, ধরা চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী ইমাম হোসাইন চৌধুরী আন্দোলনে অংশ নেয়া প্রত্যেককে অভিবাদন জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *