৬ দিন পর রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ
সরকার পতনের আন্দোলনের জেরে হামলায় সড়ক থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। তাদের মনোবল ফেরাতে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মস্থলে ফেরা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন তারা।
দেশের অন্যান্য এলাকার মত চট্টগ্রাম নগরেও গতকাল কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। প্রথমদিন সংখ্যায় কম হলেও নগরীর ৭টি এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে দেখা গেছে তাদের।
তবে নগর পুলিশ বলছে, আজ মঙ্গলবার নগরীর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং আগামীকাল থেকে নগরীর সবকটি এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ফিরবেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ বলেন, এত বড় ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। তাদের মনোবল চাঙা করতে শিক্ষার্থীরাই দায়িত্ব নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও তাদের মনোবল চাঙা করতে তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। আশা করছি ভীতি কাটিয়ে আমাদের এ সহকর্মীরা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, সা¤প্রতিক সময়ের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একটা ভীতি জন্মেছে। সে ভীতি কাটিয়ে উঠার জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ট্রাফিক সদস্যদের সমন্বয় করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা তাদের বরণ করে নিয়েছেন ফুল দিয়ে। আমাদের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়েছি। জোনের ডিসি, এডিসি ও এসিরাও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন নগরীর থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও আহত হন একাধিক পুলিশ সদস্য। জনরোষে প্রাণহানির ভয়ে তৎক্ষণাৎ যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যান আতঙ্কিত পুলিশ সদস্যরা। এতে পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে নগরীর সবকটি থানা। এরমধ্যে সরকার পতনের পর জনরোষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের প্রাণহানির জেরে কর্মবিরতিও আহ্বান করেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় সারা দেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে।
৬ আগস্ট থেকে সড়কে যান চলাচল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সামলাতে মাঠে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যার পর এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীরা এ দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য এরমধ্যে সরকারি আদেশে সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নামেন আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
গত রবিবার বিকালে সচিবালয়ে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন।
গতকাল নগরীর জিইসি মোড়, শিল্পকলার মোড় (মাজার গেট), ওয়াসা, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নামেন পুলিশ সদস্যরা। তবে সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে। ছিল আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও।
তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ফিরলেও বক্স ভেঙে দেওয়ায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনে সমস্যায় পড়ছেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন বলেন, আগে ট্রাফিক সদস্যরা ক্লান্ত হলে পুলিশ বক্সগুলোতে বিশ্রাম নিতে পারতেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় নগরীর সব পুলিশ বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশা করছি সবগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কার করে পুরাদমে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করবে।
সোমবার ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ জোনের অধীনে ওয়াসা ও টাইগারপাস মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। এই জোনের উপকমিশনার এন এম নাসির উদ্দিনও জানান, তার বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন। মঙ্গলবার থেকে নতুন করে নিউ মার্কেট, চকবাজার গুলজার মোড় ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় ট্রাফিক মোতায়েন করার কথাও জানান তিনি।
ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম জোনের উপকমিশনার তারেক আহম্মেদ জানান, প্রথম দিনে আগ্রাবাদ বাদামতল এলাকায় পুরোদমে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক সদস্যরা।
মঙ্গলবার থেকে চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, একে খান ও অলংকার মোড়ে পুরোদমে দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ সদস্যরা। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবকটি এলাকায় ট্রাফিক সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
বন্দর বিভাগে নিমতলা এলাকায় ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানান উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, মঙ্গলবার বারিক বিল্ডিং মোড় ও সল্টগোলা ক্রসিংয়েও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবেন পুলিশ সদস্যরা।