চট্টগ্রাম

নানামুখী সংকটেও চট্টগ্রাম বন্দরের ঈর্ষণীয় সাফল্য

কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রাম বন্দরে ১৭০-১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যেত। কিন্তু নানা উদ্যোগের পর বর্তমানে ভেড়ানো যায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজগুলো। এর প্রভাবে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রতি মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর ভাঙছে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড। গত এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৯ টিইইউএস। এর পরের মাস অর্থাৎ মে মাসে ৪৪ হাজার ৮২৪ টিইইউএস বেশি হয়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। অর্থাৎ এই মাসে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ লাখ ১৯৩ টিইইউএস।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত (১১ মাস) সর্বমোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭ টিইইউএস। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৭ লাখ ১৯ হাজার ২৩ টিইইউএস। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে এই অর্থবছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৪ টিইইউএস বেড়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আগে বন্দরে ছোট জাহাজ বেশি আসত। এ কারণে জেটিতে জাহাজ বরাদ্দ দিতে বেগ পেতে হতো কর্তৃপক্ষকে। জেটি খালি না থাকলে বহির্নোঙরে জাহাজগুলোকে অপেক্ষা করতে হতো। এতে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় দুটিই বেশি লাগত। বর্তমানে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের চেয়ে বেড়েছে। মে মাসে ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টিপাত, তীব্র তাপদাহসহ আরও নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে আমাদের যেতে হয়েছে। তার পরও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ানোর কারণে। অর্থাৎ ব্যয় সাশ্রয়ে শিপিং কোম্পনিগুলো ছোট জাহাজের পরিবর্তে বড় জাহাজে পণ্য আনছে।

বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকায় খরচ কমেছে বলে জানান বন্দর ব্যবহারকারীরাও। তবে এর সুফল পেতে কাস্টমের শুল্কায়ন কার্যক্রমে সময় কমিয়ে পণ্য ডেলিভারি ব্যবস্থা আরও সহজ ও দ্রুত করার দাবি জানিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে প্রতি মাসে রপ্তানি ১০ শতাংশ করে বাড়ছে। ফলে ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্যের শিপমেন্টের হারও বেড়েছে।

এমএসসি শিপিংয়ের অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিক বিভাগের প্রধান আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, কনটেইনার লোড করার কারণে আমাদের খরচ কমে আসছে। যে কারণে আমাদের ফিডার ফেডটাও অনেক কম। এটা শুধু মাদার ভেসেলের ক্ষেত্রে নয়, ফিডার ভেসেলের ক্ষেত্রেও হয়েছে।

টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপদেষ্টা মো. জাফর আলম বলেন, ‘কনটেইনার ডেলিভারির সহজ প্রক্রিয়া ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও উৎসাহিত করবে।

তবে ভিন্ন তথ্য দিলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক মোহাম্মদ শামসুল আজম। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির কারণে অনেক পোশাক মালিক মে মাসে শিপমেন্ট বাড়িয়েছেন। সে কারণেই মে মাসে রপ্তানি বেশি হয়েছে।

কনটেইনার হ্যান্ডলিং: চলতি অর্থবছরের মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ লাখ ১৯৩ টিইইউএস। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩১ টিইইউএস। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৯ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৯৯৭ টিইইউএস। গত মার্চে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৪ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের মার্চে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ২০৭ টিইইউএস। গত ফেব্রুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৬ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪০ টিইইউএস। গত জানুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬২ টিইইউএস। আগের অর্থবছরের জানুয়ারিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮৭৩ টিইইউএস।

বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিং ও: মে মাসে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যাও। এই মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরের ওই মাসের চেয়ে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন বেশি। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৯৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন। গত এপ্রিলে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৬ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০ কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ৩০ মেট্রিক টন।

জাহাজ কমলেও পড়েনি প্রভাব: চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভেড়ার পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. সোহায়েল বলেন, জাহাজ কম ভিড়লেও কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ায় বন্দরের আয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। মে মাসে জাহাজ ভিড়েছে ৩১৩টি। আগের অর্থবছরের ওই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৩৪১টি। অর্থাৎ জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে ২৮টি। চলতি বছরের এপ্রিলে জাহাজ ভিড়েছে ৩২৯টি। অর্থাৎ এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে জাহাজ কম ভিড়েছে ১৬টি। আগের অর্থবছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়েছে ৩৪২টি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *