মাদকের আসামি বিদেশে, পুলিশের ভুলে কলেজছাত্র কারাগারে
রাজশাহীতে পুলিশের ভুলে এক কলেজছাত্রকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরোয়ানাভুক্ত মূল আসামির সঙ্গে কলেজশিক্ষার্থীর নাম ও বাবার নাম মিলে যাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ভুলের বিষয়টি জানাজানির পর আজ মঙ্গলবার তাঁর জামিন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেপ্তার ওই শিক্ষার্থীর নাম ইসমাইল হোসেন (২১)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। মায়ের নাম মোসা. মনোয়ারা বেগম। তিনি গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
অন্যদিকে মাদক মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামির নাম ইসমাইল হোসেন (২০)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। মাতার নাম মোসা. বেলিয়ারা। পেশায় কাঠমিস্ত্রি ইসমাইল মাদক মামলায় আসামি হিসেবে কারাগারে ছিলেন। জামিন পাওয়ার পর এখন বাবার সঙ্গে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।
ভুক্তভোগী কলেজশিক্ষার্থীর ভাই আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের ভুলে আমার ছোট ভাই জেল খাটছে। না জানি তার মানসিক অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছে। গত রোববার এশার নামাজের পর গোদাগাড়ী থানার এসআই (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আতিকুর রহমান আমাদের বাড়িতে আসেন। আমার ভাইকে গ্রেপ্তারের সময় আমরা বলেছি, আমার ভাই কোনো আসামি নয়। পরোয়ানার ছবিও দেখাতে বলেছি। কিন্তু তারা কোনো কিছু না শুনে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’
আবদুল হাকিম বলেন, তাঁর ভাই কোনো দিন মাদক গ্রহণ করেননি। তাঁর নামে কোনো মামলাও নেই। তাঁরা গোদাগাড়ী থানায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণও দিয়েছেন। মূল আসামির তথ্যও দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের কোনো কথা শোনেনি। অথচ পুলিশ একটু যাচাই-বাছাই করলে সব পরিষ্কার হয়ে যেত। তিনি বলেন, ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে তাঁরা আজ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে অবস্থান করছেন।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাম, বাবার নাম ও গ্রাম একই হওয়ায় এটা হয়েছে। আমরা যখন গ্রেপ্তার করি, তখন ওয়ারেন্ট দেখেই গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়ারেন্টে নাম-ঠিকানার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। পাঠানোর পর পরিবারের মাধ্যমে জেনেছি, তিনি আসামি নন।’ পরে তাঁরা তৎক্ষণাৎ আদালতে একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনের আলোকে আজ তাঁর জামিন হয়ে গেছে।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাতে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই দিন রাতে তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন এসআই ইনামুল ইসলাম। পরদিন তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের চেন্নাইয়ে চলে যান। সেখানে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা ঠিক আছে। ওয়ারেন্টে একটু ভুল ছিল। এটা ছিল মাদকের ওয়ারেন্ট। কিন্তু ধারা অন্যটা ছিল। এ জন্য পুলিশের ভুল হয়ে গেছে। গ্রেপ্তারের সময় স্বজনেরা বারবার যাচাইয়ের তাগাদা দিয়েছেন, দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, অনেক সময় আসামিপক্ষ ভুল তথ্য দেয়। তখন স্থানীয় বাসিন্দারা তেমন কিছুই বলতে পারেননি। পরে যখন সন্দেহ হয়, তখন তাঁরা যাচাই-বাছাই করেন। এটা পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয় নয়। এরপরও কোথাও অবহেলা থাকলে তদন্ত করে দেখবেন।