আইন-আদালত

আদালতে দাঁড়িয়ে যা বললেন মিল্টন সমাদ্দার

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমে বর্তমানে ২৫৬ জন নাম পরিচয়হীন মানুষ রয়েছেন। ইতোপূর্বে আশ্রমে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রিমান্ড শুনানি চলাকালে মিল্টন সমাদ্দারকে কিছু প্রশ্ন করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। উত্তরে মিল্টন বলেন, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রম ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করি। পরের বছর সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। আমাদের কার্যক্রম দেখে অধিদপ্তর ২০১৮ সালে নিবন্ধন দেয়৷ এখানে শুধু পরিচয়হীন ছিন্নমূল মানুষকে এনে আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।

তিনি বলেন, আশ্রম সাধারণ মানুষের অনুদানে পরিচালিত হয়। ২০১৭ সাল থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট সংরক্ষণ করি। বর্তমানে এখানে ২৫৬ জন আশ্রিত মানুষ আছে। এ পর্যন্ত ১৩৫ জন আশ্রমে থাকা অবস্থায় মারা যায়৷ তাদের সমাহিতকরণের জন্য আমরা নিজস্ব চিকিৎসক দ্বারা নিশ্চিত হয়ে মৃত্যুর কারণ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র দিই। এটা শুধু দাফনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব মানুষকে দাফনের দায়িত্ব নিতে আমরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করি। এমনকি হাইকোর্টেও আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কেউ তাদের দায়িত্ব না নেওয়ায় নিজস্বভাবে তালিকা করে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করি।

এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিল্টন সমাদ্দারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ কামাল হোসেন। আসামেপক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন আবেদন করেন।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মানবতার ফেরিওয়ালার নামে তিনি প্রতারণা, অর্থ তছরুপ, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি ও মানব পাচারের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব তথ্য উদঘাটনে তদন্ত কর্মকর্তার প্রার্থিত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা আবশ্যক।

জবাবে মিল্টনের আইনজীবীরা বলেন, রাস্তা থেকে অসুস্থ, বয়স্ক ও ছিন্নমূল মানুষকে তুলে এনে তিনি সেবা করেছেন। এটা যদি প্রতারণা হয়, তাহলে কিছু বলার নেই। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী হিসেবে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। আশ্রমের জন্য সাভারে ছয়তলা বিল্ডিং করেছেন। সেই বিল্ডিংয়ের রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি প্রভাবশালী মহলের চক্ষুশূল হয়েছেন। রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো উপাদান মামলায় নেই। তাই আমরা রিমান্ডের বিরোধিতা করছি।

শুনানি শেষে আদালত বলেন, যেসব অভিযোগ এসেছে তা অত্যন্ত গুরুতর; এর যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাই তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।

গতকাল বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার মাধ্যমে জালিয়াতি, মানবপাচার এবং মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *