তথ্যপ্রযুক্তি

অ্যাপল ভিশন প্রোর চমক, চোখে দিলেই নতুন জগত

গত বছর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ডেভেলপার কনফারেন্স (ডব্লিউডব্লিউডিসি) অগমেন্টেড রিয়েলিটি/ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট অ্যাপল ভিশন প্রোর ওপর থেকে পর্দা সরিয়েছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হয়েছে হেডসেটটি। অ্যাপল ভিশন প্রোর প্রায় ২ লাখ ইউনিট প্রি-অর্ডার করা হয়েছে।

এই ভিআর হেডসেটের মাধ্যমে ইউজাররা স্পেসিয়াল কম্পিউটিংয়ের আধুনিক বিবর্তন অনুভব করতে পারেন। এটি ব্যবহারকারীদের চোখের সামনে থ্রি-ডি ভার্চুয়াল জগত তুলে ধরবে। নতুন এই হেডসেট বেশ কিছু যুগান্তকারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে এসেছে।

চলুন অ্যাপল ভিশন প্রো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত-
বহুল প্রত্যাশিত অ্যাপল ভিশন প্রো ব্যক্তিগত কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মান গঠন করবে। এটি ব্যবহারকারীদের থ্রি-ডি ডিজিটাল দুনিয়ায় নিয়ে যাবে। এই এআর/ভিআর হেডসেটটি স্মার্ট ডিভাইসগুলোর সাথে যুক্ত হওয়া এবং ইন্টারঅ্যাক্ট করার পদ্ধতিতেও বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। অ্যাপল ভিশন প্রো হেডসেট আরো স্বজ্ঞাত এবং নিমগ্ন কম্পিউটিং এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে।

নতুন এআর/ভিআর হেডসেটের জন্য অ্যাপ স্টোরে প্রায় ১০ লক্ষ কম্প্যাটিবল অ্যাপ রয়েছে। তবে মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাটিও অ্যাপল ভিশন প্রোর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ৬০০টি নতুন অ্যাপ এবং গেম চালু করেছে। এই ডিভাইসের সকল ক্ষমতার সুবিধা নিতে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য এই নতুন অ্যাপগুলোকে ডিজাইন করা হয়েছে। অ্যাপল ভিশন প্রো একটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি ক্যানভাসও নিয়ে এসেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের চোখ, হাত এবং কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে ডিভাইসের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন। অ্যাপল ভিশন প্রোর ডিসপ্লে ৪কে টিভির সমান রেজোলিউশন দিতে সক্ষম। যার ফলে ব্যবহারকারীরা ১০০ ফুটের সমান দূরত্ব থেকে কন্টেন্ট দেখতে পারেন।

অ্যাপল ভিশন প্রোর লিভিং স্পেসকে পার্সোনালাইজড সিনেমা হলে রূপান্তরিত করতে পারে। এটি ব্যবহারকারীদের মিডিয়া ব্যবহার করার চিরাচরিত উপায়কে নতুন রূপ দিয়েছে। খেলাধুলার ইভেন্ট থেকে শুরু করে টিভি শো এবং সিনেমা পর্যন্ত ডিভাইসটি একটি নিমগ্ন পরিবেশ তৈরি করে, যা বিনোদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ভিশন প্রো বিভিন্ন ডোমেন জুড়ে অভিনব এবং নিমগ্ন অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য একগুচ্ছ গেম-চেঞ্জিং অ্যাপও নিয়ে এসেছে।

খেলা দেখার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা থ্রি-ডি গল্ফ কোর্স মডেল ব্যবহার করে রিয়েল-টাইম শট ট্র্যাকিংয়ের মতো ফিচারসহ পিজিএ ট্যুর উপভোগ করতে পারবে। মাল্টিভিউ এনবিএ স্ট্রিমিংয়ের জন্য এতে মোট পাঁচটি ভিন্ন ব্রডকাস্ট সাপোর্ট করে। এছাড়াও, হেডসেটে ব্যবহারকারীরা পিচ স্ট্যাটিসটিকস এবং একটি বেসবল স্টেডিয়াম ভিউসহ মেজর লিগ বেসবল (এমএলবি) গেমটিও ব্যবহার করতে পারবেন। ঘোড়দৌড়ের থ্রি-ডি মানচিত্র, উচ্চ-মানের ভিডিও এবং রেসিং ইভেন্টের জন্যও নিমগ্ন পরিবেশ থাকবে।

উন্নততর স্ট্রিমিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য অ্যাপল ভিশন প্রোডিজনি প্লাস, ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং ডিসকভারির ম্যাক্স প্ল্যাটফর্মের সাথে একটি প্যাকেজ যুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, অ্যাপল টিভি ইমারসিভ ভিডিওর জন্য স্পেসিয়াল অডিও অফার করে।

বিনোদন ছাড়াও অ্যাপল ভিশন প্রোর থ্রি-ডি ইউজার ইন্টারফেসের সাথে মাল্টিটাস্কিং এবং কোলাবরেশন করা সহজ। বক্স, মাইন্ড নোড-এর মতো বেশ কিছু অ্যাপ ফাইল ম্যানেজমেন্ট এবং প্রোজেক্ট ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য আরো সহজে হবে। এমনকি এটি মাইক্রোসফট ৩৬৫ প্রোডাক্টিভিটি অ্যাপের সাথে ইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট করে এবং উন্নত ম্যাক ক্ষমতার জন্য একটি ভার্চুয়াল ডিসপ্লে থাকবে।

অ্যাপল ভিশন প্রো বর্তমানে ২৫০ টিরও বেশি গেমিং টাইটেল সাপোর্ট করে, কোরো ইন-অ্যাপ পারচেজ ও বিজ্ঞাপন ছাড়াই। এতে সুপার ফ্রুট নিনজা, সিন্থ রাইডার্স এবং গেম রুমের মতো কিছু স্পেসিয়াল গেম রয়েছে। এই উন্নত অভিজ্ঞতাগুলো ছাড়াও অ্যাপল ভিশন প্রো ঐতিহাসিক স্থান, মিউজিয়ামের মতো নানা স্থানের থ্রি-ডি ট্যুর করাবে। এমনকি এটি থ্রি-ডি আবহাওয়া মানচিত্রও সাপোর্ট করে। অ্যাপল ভিশন প্রো শুধুমাত্র একটি ডিভাইস নয়, প্রযুক্তির সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার সম্পূর্ণ নতুন উপায় রয়েছে। এর উদ্ভাবনী ফিচার, বৈচিত্র্যময় অ্যাপ ইকোসিস্টেম এবং নিমগ্ন অভিজ্ঞতাসহ ভিশন প্রো ডিজিটাল স্পেসে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *