আনোয়ারায় ‘প্রাইভেট মাদ্রাসায়’ বন্দিদশা, চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা!
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নে অবস্থিত একটি প্রাইভেট মাদ্রাসায় বন্দিদশা সহ্য করতে না পেরে এক শিশু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৮ দিকে বারশত ইউনিয়নের কালিবাড়ি এলাকায় অবস্থিত দারুত তাহফিজ বালক বালিকা মডেল মাদ্রাসা নামক একটি ‘প্রাইভেট মাদ্রাসায়’ এই ঘটনা ঘটে।
শিশু শিক্ষার্থী মো. ওমাইর (৯) বটতলী ইউনিয়নের আইরমঙ্গল এলাকার মো. সৈয়দের পুত্র।
আজ সরেজমিন মাদ্রাসাটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমে ১৫ জন ছাত্রকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা অসহায়ের মত ফেল ফেল করে লোহার গ্রিলের রড ধরে তাকিয়ে আছে। আবার অনেকে কান্না করছে।
মারা যাওয়া শিশু মো. ওমাইরের সাথে একই রুমে থাকা আনাসের (৮) সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের; এ সময় আনাস বলেন, ওমাইর দুই-তিন দিন ধরে বলেছিল, এরকম বাঁধা থাকতে ভালো লাগছে না। আমি মরে যাব।
আনাস আরও বলেন, আমারও ভালো লাগে না। খেলতে পারি না। ঘুমাতেও কষ্ট, এক রুমে অনেকজন এক সঙ্গে। এরকম থাকতে আমাদের কারও ভালো লাগে না। আমাদের মা-বাবা জোর করে দিয়ে গেছে। একটু দুষ্টুমি করলে হুজুররা খুব মারে।
শিক্ষার্থী ওমাইরের বাবা মো. সৈয়দ বলেন, আমি কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করব? সে (মাদ্রাসার পরিচালক আব্দুর রহমান) তো আমার শ্যালক। তবে প্রাইভেট মাদ্রাসা নামের এসব জেলখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমি না বুঝে আমার ছেলেটাকে জেলখানায় ভরে দিলাম। ছেলেটাকে বোয়ালিয়া বড় মাদ্রাসায় দিলে হয়তো সে আত্মহত্যাটা করতো না।
মাদ্রাসার পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, সকালে আমি তাদের পড়িয়েছি। ৮টার দিকে সে (ওমাইর) এই ঘটনা ঘটালো। সে সম্পর্কে আমার ভাগিনা হয়।
শিক্ষার্থীদের জেলখানার মতো একটি রুমে এভাবে বন্দি রাখলে তো এদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে- এই প্রসঙ্গে আব্দুর রহমান বলেন, প্রাইভেট মাদ্রাসায় এরকম চাপে থাকতে হয়। না হলে হাফেজ কীভাবে হবে।
আনোয়ারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থী ওমাইর আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে মাদ্রাসাটি দেখে মনে হয়েছে ছেলেটি চাপ সহ্য করতে না পেরে এই (আত্মহত্যার) ঘটনা ঘটিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরবি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, দেখা যাচ্ছে অল্প শিক্ষিত কিছু হুজুর একটি রুম ভাড়া নিয়ে ২৫ থেকে ৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাইভেট মাদ্রাসা চালু করে দেয়, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মন-মানসিকতা থেকে। সেই শিক্ষার্থীরা প্রচুর মানসিক চাপে থাকে। সে অবস্থায় অনেক শিশু শিক্ষার্থী এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে, আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তও নেয়। শিশুদের শিক্ষার স্থান হবে আনন্দদায়ক, চাপদায়ক নয়। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি খুব জরুরি।