জাতীয়

ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি মাঠে থাকবেন

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে সক্রিয় থাকবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ঋণখেলাপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আপত্তি জানাবে। এ কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ খেলাপি প্রার্থীর তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তুলে ধরবেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে। এতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের কাছে ওই সার্কুলারটি পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। আজ শুক্রবার থেকে বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে। চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি চলবে আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণখেলাপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তি জানাবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন হলেও খেলাপি ঋণ নবায়ন বা পরিশোধ করতে হবে। সে হিসাবে গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত যেসব ঋণখেলাপি নবায়ন বা পরিশোধ করেছেন তারাই কেবল প্রার্থী হতে পারবেন। অন্য ঋণখেলাপিরা প্রার্থী হতে পারবেন না।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তারা বিভিন্ন দল ও জোটের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা সংগ্রহ করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে আগেই তাদের ঋণখেলাপির তথ্য হালনাগাদ করেছে। বৃহস্পতিবার ও এর আগে যারা মনোনয়নসপত্র জমা দিয়েছেন সেগুলোর তারিখও সংগ্রহ করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকেই প্রার্থীদের ঋণখেলাপির তথ্য বাছাই শুরু করেছে মাঠপর্যায়ের ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো। আঞ্চলিকভাবে যারা খেলাপি তাদের ব্যাপারে আপত্তি জানাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানির শাখা। নির্বাচনি এলাকার বাইরের যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর খেলাপি ঋণ রয়েছে তাদের ব্যাপারে আপত্তি জানানো হবে প্রধান কার্যালয় থেকে। এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয় প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকার শাখা কর্মকর্তার কাছে আজ সকালের মধ্যেই পাঠিয়ে দেবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেও পাঠাবে।

এদিকে বুধবার পর্যন্ত যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের তালিকা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের তালিকার কিছু পাঠানো হয়েছে ওইদিন রাতেই। আজ শুক্রবার পুরো তালিকা পাঠানো হবে। ব্যাংক সেগুলো কেন্দ্রীয় ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে রক্ষিত ডাটাবেজ থেকে বাছাই করে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠিয়ে দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, তাদের প্রার্থীদের তালিকা বাছাই করতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীদের তালিকা চেয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী কৃষি খাতের ক্ষুদ্রঋণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। কৃষি খাতের ক্ষুদ্রঋণের মধ্যে সুদসহ কেবল ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মাফ পাওয়া যাবে। এর বেশি হলে তিনি ঋণখেলাপি হিসাবে প্রার্থী হতে পারবেন না। অন্য ঋণের ক্ষেত্রে যে কোনো অঙ্কের খেলাপি হলেই তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না। এর আওতায় ঋণ গ্রহীতা ছাড়াও ঋণের জামিনদারও পড়বেন। এছাড়া কোনো কোম্পানি বা ফার্ম ঋণখেলাপি হলে এর পরিচালক ও অংশীদারও ঋণখেলাপি হিসাবে গণ্য হবেন। তখন তিনিও প্রার্থী হতে পারবেন না। সার্কুলারে আরও বলা হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রার্থীর বিষয়ে সমুদয় তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো নিজেরই যাচাই করতে হবে তিনি খেলাপি কিনা। একই সঙ্গে ওই প্রার্থীর নাম-ঠিকানাসহ শনাক্তকরণ তথ্য ব্যাংকের বা ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। একটি কপি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠাতে হবে। সব পক্ষ থেকে প্রার্থীর খেলাপি ঋণের তথ্য যাচাই করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *