আন্তর্জাতিক

এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি যে সুবিধা দেবে

ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহকে নজরদারিতে রাখতে ইউরোপিয়ান যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবরে কোনও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ চলছে। অভিযান পরিচালনা না হলেও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন পরিস্থিতি উত্তরণে প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নৌবাহিনী জাহাজটির আশপাশে কেবল অবস্থান নেওয়ার কথাই জানিয়েছে। তবে অভিযানের বিষয়ে কোনও কিছু জানায়নি তারা। জাহাজের মালিকপক্ষ বলেছে, কোনও অবস্থাতেই তারা সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে নন। তবে ওই উপকূলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন চলমান পরিস্থিতিতে কিছু ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।

উত্তর পশ্চিম ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তায় ইউরোপিয়ান নৌবাহিনী পরিচালিত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত নাম ইইউ ন্যাভ ফর আটালান্টা। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে বাহিনীটি এমভি আব্দুল্লাহর কাছে তাদের অবস্থানের তিনটি ছবি ও একটি ভিডিও প্রকাশ করে।

ইইউ নেভাল ফোর্সের সদস্যদের নজরদারির পাশাপাশি ওই আকাশসীমায় তাদের হেলিকপ্টারও টহল দিতে দেখা যায় ভিডিওতে। এমন অবস্থান জিম্মি মুক্তিতে প্রভাব রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনাম চৌধুরী।

প্রথমত, এত কাছে ইউরোপিয়ান বাহিনীর মতো শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি দস্যুদের ওপর একটা চাপ তৈরি করবে। যা সমঝোতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

দ্বিতীয়ত, পূর্ব আফ্রিকার ওই উপকূল থেকে নতুন কোনও দস্যুদল সাগরে প্রবেশ করতে পারবে না। ফলে দস্যুদের তৎপরতা কমে আসবে।

গত দু’দিনে আরও দুটি সম্ভাব্য দস্যুতার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে ইউ ন্যাভ ফর। দুটি জাহাজই লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী। এ নিয়ে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) পর্যন্ত ২৪টি জাহাজ এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যার মধ্যে ১২টিকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

বুধবার সেহরির পর পর ছেলের ফোন পান শাহনুর বেগম। তার ছেলে এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান। কতটা দুঃসহ দিন পার করছেন তার ছেলেসহ অন্য নাবিকরা সেই কথা জানান তিনি।

শাহনুর বেগম বলেন, ঠিকমত পানি দেয় না, খাবার দেয় না। হয়তো একবেলা ইফতার করল, আরেক বেলা খাবার নেই। ডাকাতরা ৯-১০দিনে প্রায় সব খাবার শেষ করে ফেলেছে বলে ছেলের কাছে শুনেছেন তিনি।

জিম্মি থাকা ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের সাথে তার বড় ভাই ওমর ফারুকের সর্বশেষ কথা হয় এই সপ্তাহের শুরুতে। মঙ্গলবার ফারুক জানান, জলদস্যুরা প্রতিদিন খাবার নষ্ট করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বড় সংকটে পড়তে হবে তাদের। তার ওপর দস্যুদের সংস্পর্শ এবং অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে বলে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এর আগে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করেছিল। আতিকুল্লাহ খান জানিয়েছেন, সেই সময় থেকে তাদের কেবিনের পরিবর্তে এমনকি ঘুমের সময়েও ব্রিজেই (জাহাজ চালনোর কক্ষ) অবস্থান করতে হচ্ছে।

শাহনুর বেগম বলেন, তিন নাতনি বলছে, বাবা কথা দিয়েছে তাদের সাথে ঈদ করতে আসবে। ঈদের আগেই ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *