আন্তর্জাতিক

কূটনীতিকদের জন্য প্রথম মদের দোকান চালু করছে সৌদি আরব

অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য রাজধানী রিয়াদে প্রথম মদের দোকান চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি আরব। এই পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত সূত্র ও একটি নথিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

নথি পর্যালোচনা করে রয়টার্স লিখেছে, ক্রেতাদের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স কোড সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া মদ ক্রয়ের মাসিক সীমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচির একটি বড় পদক্ষেপ এই মদের দোকান। রক্ষণশীল মুসলিম দেশটিকে পর্যটন ও বাণিজ্যিক গন্তব্যে পরিণত করতে এই সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মে মদপান হারাম। অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমাতে যে ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এই দোকান চালু সেটির অংশ।

নথি অনুসারে, মদের দোকানটি রিয়াদের কূটনৈতিক পাড়ায় অবস্থিত। এখানে বিভিন্ন দূতাবাস ও কূটনীতিকরা বসবাস করেন। দোকানটি থেকে শুধু অমুসলিম কূটনীতিকরা মদ কিনতে পারবেন।

অমুসলিম প্রবাসীরা দোকানটি থেকে মদ কিনতে পারবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। দেশটিতে লাখো প্রবাসী রয়েছেন। যদিও বেশিরভাগ শ্রমিক মুসলিম এবং তারা এশিয়া ও মিসর থেকে আসা।

পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দোকানটি চালু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মদপানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে কঠোর আইন রয়েছে। মদপানে দোষী ব্যক্তিকে দোররার আঘাত, প্রত্যর্পণ, জরিমানা বা কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেত্রাঘাতের পরিবর্তে কারাদণ্ডের প্রচলন করা হয়েছে। দেশটিতে শুধু কূটনৈতিক যোগাযোগে বা চোরাই বাজারে মদ পাওয়া যায়।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে বুধবার সরকার কূটনৈতিক চালানে মদের আমদানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কথা নিশ্চিত করেছে।

সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন (সিআইসি) বলেছে, কূটনৈতিক মিশনে আসা মদজাত বস্তু ও পণ্যের বেআইনি বাণিজ্য ঠেকাতে নতুন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে সিআইসি বলেছে, নতুন প্রক্রিয়া অমুসলিম দূতাবাসের কূটনীতিকদের এসব পণ্য নির্দিষ্ট কোটায় পাওয়া নিশ্চিত করা অব্যাহত রাখবে।

বিবৃতিতে মদের দোকান চালুর পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু বলা হয়েছে, নতুন ফ্রেমওয়ার্কে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কনভেনশন মেনে চলা হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে সৌদি আরব রক্ষণশীল ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। যেমন, জনসমাগমস্থলে নারী ও পুরুষদের আলাদা করা, নারীদের বোরকা পরার আবশ্যকতা শিথিল হয়েছে।

ক্ষমতা সুসংহত করার উদ্যোগে ভিন্নমতাবলম্বী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার পাশাপাশি দেশটিকে পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমন, কনসার্ট আয়োজন, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি। তবে ভিশন ২০৩০-এর আওতায় স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং লজিস্টিক কেন্দ্র হয়ে ওঠার পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি আরবের। যা লাখো সৌদি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *