চট্টগ্রামরাজনীতি

চট্টগ্রামে ১৯ বছর পর কমিটি, এক মাসেই বিরোধ তুঙ্গে

আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নতুন কমিটির আশায় একে একে কেটে গেছে ১৯ বছর। এরপর ২০২৪ সালে নতুন কমিটি হয়। কথা ছিল নতুন কমিটি ঘোষণার পর চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ কেটে যাবে। বিভেদ ভুলে একসঙ্গে পথ চলতে শুরু করবেন স্বাচিপের নেতারা, গুছিয়ে নেবেন সংগঠন। কিন্তু তা আর হলো না। বিভেদ তো কাটল না। বরং ১৯ বছর পর কমিটি গঠন হলেও এক মাসেই চিকিৎসকদের দুই পক্ষে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এ অবস্থায় সংগঠনের তৃণমূলে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। এখন বিভেদ দূর করতে দুপক্ষের চিকিৎসকদের ঢাকায় ডেকেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার স্বাচিপের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই এখন একেবারে দুই মেরুতে অবস্থান করছেন চিকিৎসক নেতারা। এমনকি একই সংগঠনের নেতা হলেও একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে। দুপক্ষে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ আর উত্তেজনা। অস্থিরতা বিরাজ করছে সংগঠনের তৃণমূলে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দীর্ঘ বছর পর কমিটি হওয়ার পরও কেনো বিভক্তির পথে স্বাচিপ?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৫ সালে স্বাচিপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। তখন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা ও চমেক শাখায় দুটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর কেটে যায় দেড় যুগ। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে দুই শাখায় কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় স্বাচিপ।

জেলা শাখায় সভাপতি করা হয় ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় ডা. আরিফুল আমীনকে। আর দুজন সহ-সভাপতি দেওয়া হয় জেলা শাখায়। একজন সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাচিপের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান অন্যজন চমেক চিকিৎসক ডা. রফিকুল মাওলা। এদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি তিনজনই নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এর মধ্যে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেয়ের জামাই এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফুল আমীনকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে চমেক শাখায় সভাপতি করা হয় ডা. রবিউল করিমকে আর সাধারণ সম্পাদক ডা. রিজোয়ান রেহানকে। দু’জনই আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। তবে একই নেতার অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও এমন দূরত্ব স্বাচিপের কেন্দ্রীয় এক নেতা ও চট্টগ্রাম বিএমএর প্রভাবশালী এক নেতাকে ঘিরে।

সদ্য কমিটির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, নিজেদের মধ্যে মান-অভিমান ভাঙ্গাতে অনেক চেষ্টা করেও সবাইকে এক করা যায়নি। বিভিন্ন কর্মসূচি একসঙ্গে পালনে কথা বললেও বার বার নিজেরাই নিজেদের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছেন কয়েকজন। গত ২১ মে চমেকের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুষ্পার্পণকালে অংশ নেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আরিফুল আমীন ও চমেক শাখার সভাপতি ডা. রবিউল করিম। ওই সময়ে অংশ নেন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীও। এরপর গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের প্রয়াত শীর্ষ নেতাদের কবর জিয়ারত অংশ নেন আলোচ্য এ দুই নেতা। কিন্তু তাতে কমিটির অন্য কোনো সদস্য ছিল না।

চট্টগ্রামের নেতাদের এ ‘বিভেদ’ মেটাতে শনিবার জেলা ও চমেক শাখার নেতৃবৃন্দকে ডেকেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিন বিকেলে এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামীকাল (শনিবার) একটি মিটিং আছে। উনারা (চট্টগ্রামের নেতারা) সবাই আসবেন। নিশ্চিত নই যে কালই মিটিংটা হচ্ছে কি-না। কিছুটা সমস্যা আছে। তবে এগুলো বড় বিষয় নয়। আশা করি এগুলো সহজেই ঠিক করে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *