চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির মৃত্যু: জরুরি তদন্ত প্রতিবেদন তলব

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় দাখিল করা নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নিরূপণের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত অভিযোগকারীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ওই সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আবেদন দাখিলের ১২দিন পর রোববার (৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ বেগম জেবুনেনেছা এ আদেশ দিয়েছেন।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত বলেন, ‘মামলার আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর অভিযোগকারীর উপস্থিতিতে আদালত আজ (রোববার) আদেশ দিয়েছেন। এতে আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণের নির্দেশনা দেননি। তবে পিবিআইকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা তদন্তপূর্বক নিরূপণের আদেশ দিয়েছেন। ২৭ মার্চ প্রিলিমিনারি এনকোয়ারি রিপোর্ট জরুরি ভিত্তিতে দাখিলের জন্য পিবিআইকে আদেশ দিয়েছেন। এ প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।’

গত ২০ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা মামলার আবেদনে জেল সুপার-ওসিসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তারা হলেন- বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা, সাইফুল ইসলাম ও রিযাউল জব্বার, কনস্টেবল কামাল ও আসাদুল্লাহ, থানায় সে সময় দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার এবং কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, জেলার এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন, মো. ইব্রাহিম ও কারা ওয়ার্ড মাস্টার।

নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ৬ ধারা উল্লেখ করে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু অভিযুক্তদের মধ্যে অধিকাংশই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারি আছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনে মৃত্যু ঘটানোর গুরুতর অভিযোগ আছে, প্রাথমিক সত্যতা নিরূপণ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা গ্রহণের আদেশ সমীচীন হবে না। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আগে নিরূপণ করে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন তলব করেছেন আদালত।

আদেশের একাংশে আদালত উল্লেখ করেছেন, আনীত অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (২) ধারার অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্তরা অন্যূন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অন্যুন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কারাগারে মৃত রুবেল দে’র বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ জৈষ্ঠ্যপুরা গ্রামে। গ্রেফতারের পর রুবেলকে নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ এনে তার স্ত্রী পূরবী পালিত গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলার আবেদন দাখিল করেছিলেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। রাত ৮টায় তার বিরুদ্ধে মদ উদ্ধারের ভূয়া মামলা সাজানো হয়। রাত ৯টার দিকে পুলিশ আবেদনকারির মোবাইলে কল দিয়ে রুবেলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০০ লিটার চোরাই মদ উদ্ধার দেখিয়ে ভূয়া মামলা করা হয় অভিযোগ করে আবেদনে বলা হয়, পরদিন আদালত রুবেলকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রিজন ভ্যানে করে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবেলের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য কারাগারে যান। কারারক্ষীরা মুমূর্ষু অবস্থায় রুবেলকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসেন। তখন রুবেলের কপালে, ডান চোখের ভ্রুয়ের ওপর রক্তাক্ত কাটা জখম এবং ‍মুখমণ্ডলে নীল ফোলা জখম দেখা যায়। তার মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরছিল। প্রচণ্ড আহত ও নিস্তেজ অবস্থায় কথা বলার শক্তি তার ছিল না। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায় পূরবী খবর পান, তার স্বামী কারাগারে মারা গেছেন।

আবেদনকারীর আইনজীবীর ভাষ্যমতে, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর পুলিশ রুবেলকে মারধর করে নির্যাতন চালায়। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৪ জানুয়ারি আদালত জেল সুপারকে রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আর রাতেই তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জেল কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারেন না। গ্রেফতারের সময় রুবেল পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়ার দায় ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা এড়াতে পারেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *