চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ
করোনাকালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের’ চতুর্থ বর্ষপূর্তি এবং তৃতীয় স্বেচ্ছাসেবী অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, পৃথিবীর দেশে দেশে দুঃসময়ে বিভিন্ন হিরোর জন্ম হয়, বীরের জন্ম হয়। করোনাকালে ফিল্ড হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের সেই দুঃসময়ের হিরো।
করোনাকালে সবাই যখন ঘর খুঁজছিল, নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, তখন এই ফিল্ড হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকরাই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং স্বেচ্ছাশ্রমে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে দেশের চিকিৎসা জগতে যে সাহসের সঞ্চার করেছিলেন, তা পরবর্তী করোনাযুদ্ধে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান, নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. বাসনা রানী মুহুরী ও প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাহেদ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক করোনাকালের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ভয়াল এক সময় পার করেছে পৃথিবী। যে পৃথিবীতে অতি আপনজনেরাও হাত ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেখানে ফিল্ড হাসপাতালের দুঃসাহসী উদ্যোগ মানুষকে বাঁচার আশা জাগিয়েছিল। নিজে ১৬ দিন হাসপাতালে থাকার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার দুই পুত্র আমার সাথে হাসপাতালে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই ১৬ দিন আমার ড্রাইভার আমার সাঙ্গে একই রুমে হাসপাতালে ছিল। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাঝেই যে মানব জন্মের সার্থকতা, তা করোনাকালে ফিল্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রমাণ করেছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান করোনাকালের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ভয়াল ওই সময়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা আমাদেরকে আশাবাদী করেছিল।
নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. বাসনা রানী মুহুরী করোনাকালে নিজের পুরো পরিবার আক্রান্ত হওয়ার ভয়াল স্মৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই দুর্দিনে ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা আমাদেরকে সাহসী করেছিল।
প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, করোনাকাল পৃথিবীকে অচিন করে তুলেছিল। ভয়াল সেই অবস্থার মাঝে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের আত্মত্যাগ মানুষ কখনো ভুলবে না।
স্বাগত বক্তব্যে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, পৃথিবীতে অনেক স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে। কিন্তু অঙ্গীকারনামায় নিজের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় স্বাক্ষর করে স্বেচ্ছাসেবী কাজ করার মতো স্বেচ্ছাসেবক আছে কিনা আমার জানা নেই। তাদের জন্য এবং সকল স্বেচ্ছাসেবকদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই আজকেই এই আয়োজন।
ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বর্ষপূর্তি এবং তৃতীয় স্বেচ্ছাসেবী অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সমাজের নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ বছর স্পেশাল ক্যাটাগরিতে শিল্প গ্রুপ বিএসআরএম, এলবিয়ন গ্রুপ ও শাহেন শাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডার ট্রাস্ট এবং স্বেচ্ছাসেবী ক্যাটাগরিতে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, স্ন্যাক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ, সিক্ত বাংলাদেশ ও কুলগাঁও প্রত্যাশা ক্লাবকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের ৫০টির অধিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।