চট্টগ্রাম-৯ আসনে মহিউদ্দিনপুত্রের নির্ভার নির্বাচন
এটা মহিউদ্দিন চৌধুরীর এলাকা। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নয়, পুরো চট্টগ্রামের প্রিয় নেতা। বাবার সেই তুমুল জনপ্রিয়তা ছেলের জন্য মহাআশির্বাদ। মাঠে নেই বিএনপির মতো বড় দলের প্রার্থীও। সুতরাং এবার মহিউদ্দিনপুত্রই এখানে এমপি হবেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে কে হবেন এমপি—এমন আলোচনায় এভাবেই উঠে এসেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগরের কালামিয়া বাজার থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে মিয়াখান রোডের হাটখোলা এলাকা। সেখানে ‘মায়ের দোয়া ঝালবিতান’ নামে একটি দোকানে নির্বাচনী আলোচনায় ঝড় তুলছিলেন স্থানীয় মোহাম্মদ শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নুরুল হুদা। চট্টলবীর সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী এই এলাকায় মানুষের সাথে পায়ে হেঁটে দুয়ারে দুয়ারে গেছেন পুলিশ প্রটোকল ছাড়া। তাঁর ছেলেও একইরকম। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যান, মানুষকে সম্মান করেন। বাবার মতো গণমানুষের নেতা হয়ে উঠছেন তিনি। বাবার জনপ্রিয়তা ছেলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আছে। এবারও তিনি জিতবেন।’
সরেজমিনে এই আসনের কোতোয়ালী, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, উত্তর পাঠানটুলী, বলিরহাট, হাটখোলা, মিয়াখাননগর, সৈয়দ শাহ রোড, কাতালগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণ বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের মুখে মুখে শোনা গেছে নানা নওফেলবন্দনা।
এবার মহিউদ্দিনপুত্রের নির্বাচনী যাত্রা খুবই সহজ বলে মনে করছেন ভোটাররা। শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পুরোপুরি নির্ভার আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী। তবে অন্য দলের প্রার্থীদের মোটেও খাটো করে দেখছেন না তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিদ্বন্দ্বীই ভাবছেন। অলিগলি ঘুরে শুনছেন ভোটারদের সুখ-দুঃখের কথা। নগরের কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার আর ডবলমুরিং থানার আংশিক এলাকা নিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসন। ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আর ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এসব এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটিকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন, জাতীয় পার্টির সানজিদ রশীদ চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির সুজিত সরকার, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মিল্টন দাশ গুপ্ত প্রার্থী হয়েছেন। তবে নওফেল ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোস্টার তুলনামূলক কম। প্রচার-প্রচারণাও সীমিত।
ভোট চাওয়া যতটা সহজ, ভোট পাওয়া ততটা সহজ না। ভোট আসলে প্রার্থী হবেন, কয়েকশ ভোট পেয়ে আবার চুপসে যাবেন। এরপর আর খোঁজ খবর থাকবে না। তাহলে কেন তারা প্রার্থী হন।’— বলছিলেন নগরের সাব-এরিয়া এলাকার বাসিন্দা রাজিব চৌধুরী। এই আসনে আগে যারা এমপি হয়েছেন কমবেশি সবাই ‘বাঘা বাঘা’ নেতা বলেও মন্তব্য তাঁর। এবার চট্টগ্রাম-৯ আসনে অনেক প্রার্থী— এই প্রশ্নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাজিব চৌধুরীর এমন জবাব।
ভোটের মাঠ অনেকটা সহজ হলেও ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখেই দেখছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নওফেল বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভোটাররা বেশ উৎফুল্ল, উৎসুক। আমরা মনে করি চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রচুর টার্নআউট হবে। ভোটার আসবেন ভোট দিতে। ভোট কাস্টিং অনেক বাড়বে। ভোটের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন অনেকে। বিরোধী পার্টিকে ‘মিস’ করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, আরও সময় আছে, দেখা যাক। কতটুক কী হয় এখনই বলা যায় না। ভোট দিলে সুন্দর লাগে, খুশির বিষয়। আনন্দ পাই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার ৪,০৯,৫৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,১১,৭৪৭ জন এবং নারী ১,৯৭,৮৩২ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮ জন।