চট্টগ্রাম

চসিকে নতুন ‘মধুর চাক’ বাঁধতে চান রফিকুল

নানা নাটকীয়তার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম গিয়েছিলেন অবসরে। ঈদ-নববর্ষের টানা ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে সোমবার ‘দলবল’ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে করেছেন দেখা-সাক্ষাত। এর পর তাঁকে ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে নগরভবনজুড়ে। তাঁর এ সাক্ষাতকে আড়চোখে দেখছেন কেউ কেউ।

‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এক্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে সাবেক কর্মকর্তাদের একটি সংগঠনের ব্যানারে সিটি মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন রফিকুল। সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ সংগঠনের যাত্রা। সংগঠনটির কারিগরও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। সংগঠনের সর্বোচ্চ আহ্বায়ক পদেও অধিষ্ঠিত তিনি।

গুঞ্জন উঠেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নতুন করে মধুর চাক বাঁধতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একাট্টা করেছেন ‘বিতর্কিত’ সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী। সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে ‘আঠার মতো’ লেগে থাকতে চান ৩৫ বছরের এই কর্মস্থলে। যদিও রফিকুল ইসলামের বক্তব্য, সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কের মেলবন্ধন ঘটানোই এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। পাশাপাশি করপোরেশনের সঙ্গেও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সেতুবন্ধন হলো। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সাবেক কর্মকর্তাদের প্রথম সংগঠন হিসেবে এটিকে সহজভাবে নিয়েছেন অনেকে।

প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার, তুমি কার?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য কোনো কর্মকর্তা যদি এই উদ্যোগটা নিতেন তাহলে হয়তো কারো কোনো আপত্তি থাকতো না। সাবেকদের নিয়ে সংগঠন। খোলা চোখে ভালো মনে হচ্ছে। কিন্তু সিক্স সেন্স খাটালে বিষয়টা জলের মতো ক্লিয়ার। চেয়ার টানাটানি করে তো কম জল ঘোলা করেননি রফিকুল। যখন দেখলো কোনোভাবে আর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো যাচ্ছে না। তখনই পরামর্শের নামে যাতে করে করপোরেশনের যেকোনো বিষয়ে সহজেই নাক গলানো যায় সেই ব্যবস্থাই এখন করেছেন তিনি। উনি যেহেতু আহ্বায়ক তাই বুঝতে হবে উনার কথার দামও থাকবে অনেক।’

অন্যদিকে তাঁর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এক ছাদের নিচে থাকার বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ধরনের দলাদলি না করে সংগঠন চালিয়ে নেওয়া গেলে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য এটি বিরাট একটি প্ল্যাটফর্ম। কর্মস্থল চাকরিজীবীদের দ্বিতীয় পরিবার। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ থাকা জরুরি, ঠিক তেমনি সহকর্মীদের সঙ্গেও। এক্ষেত্রে সংগঠনটি চেইনের ভূমিকা রাখবে। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার জন্যও তারা ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারবেন।’

রফিকুল নয়, নবীউলই চসিকের প্রধান প্রকৌশলী

এ প্রসঙ্গে চসিকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এটা আসলে আমাকে আগে থেকে বলছিলো সবাই একটা অ্যাসোসিয়েশন করা উচিত। অবসরে চলে যাওয়ার পর কারো খবরও থাকে না। যারা অবসরে গেছেন তারা বলছিল যে সবাই তো সবকিছু পারে না। তাই আপনি যাওয়ার পরে একটা সংগঠন করবেন। আমিও চিন্তা করলাম যে একটা সংগঠন থাকা দরকার। নিজেদের মধ্যে ফ্যামিলি ফেলোশিপ ধরে রাখা। আমরা যেহেতু এতোদিন সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলাম সিটি করপোরেশন চাইলে আমরা আমাদের আইডিয়াগুলো শেয়ার করবো। এর মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের একটা সেতুবন্ধন থাকলো। আমরা যারা রিটায়ার্ড করছি তাদের মধ্যেও একটা ফেলোশিপ থাকলো। এই দুইটাই মূল উদ্দেশ্য।’

গুঞ্জন প্রসঙ্গে চসিকের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটার সঙ্গে তো সিটি কর্পোরেশনের কিছু নেই। আমরা যারা অবসরে তাদের মধ্যে একটা ফেলোশিপ থাকা। সিটি করপোরেশনের অফিসিয়াল কার্যক্রমের সঙ্গে আমাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।’

কারা আছেন রফিকুলের সঙ্গে

সদ্য যাত্রা করা এ সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রাখা হয়েছে সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে। যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলামকে। সাত সদস্যের কমিটিতে সদস্য সচিব হয়েছেন সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী।

অন্য সদস্যরা হলেন— অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডা. আশিস কুমার মুখার্জি, অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ ও অবসরপ্রাপ্ত ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা আহমেদুল হক।

কী কথা হলো সৌজন্য সাক্ষাতে

সোমবার (১৫ এপ্রিল) সংগঠনের পক্ষ থেকে মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মেডিকেল অফিসার আবদুর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু ছালেহ ও মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব দাশ, অসীম কুমার, এস এম আয়ুব, সদরুল হকসহ চসিকের অবসরপ্রাপ্ত বেশ কজন কর্মকর্তা।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘এই সংগঠন তৈরি হওয়ায় সাবেক কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগাতে পারবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এই সংগঠনকে এগিয়ে নিতে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাব। আপনারা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যেকোনো বিপদে আমাকে পাশে পাবেন।’

প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার নিয়ে নানাকাণ্ড

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বদলি করা হলেও শেষমেশ তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। নির্দেশনা অনুযায়ী, অবমুক্তের দিনে ‘অসুস্থতায়’ হাসপাতালে, এরপর বদলির আদেশ ঠেকাতে হাইকোর্টের বারান্দায়। ওই সময়ে নতুন পদায়িত কর্মকর্তা নবীউল ইসলামও তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন রিট করে। চার মাস ধরে বদলি ঠেকানোকাণ্ড চালিয়ে অবসরে যান প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। চসিকের চেয়ারে ঠাঁই না পেয়ে পুরনো কর্মস্থল থেকে অবসরে গেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) পাবনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নবীউল ইসলাম। এখনো প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে পাকাপোক্তভাবে কাউকে বসায় নি মন্ত্রণালয়। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন উল ইসলাম। গত (২৫ মার্চ) তাঁকে এ দায়িত্বভার দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *