চুনতি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র: জনবলসংকটে মিলছে না চিকিৎসাসেবা
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের এক বছর পরও চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব প্রয়াত মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন বীর বিক্রম তার গ্রাম চুনতিতে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। তিনি নিজে ২০১৯ সালের ৪ জুলাই ভবন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও জনবলসহ চিকিৎসক না থাকায় এটি আর পুরোদমে চালু হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা এই হাসপাতালে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও। আধুনিক ডেলিভারি রুম ও আসবাবপত্রে সুসজ্জিত এই হাসপাতালে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সব। একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম কোনো রকম সচল রাখা হয়েছে। হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আশপাশের ৩ লাখ মানুষ।
চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি ঘিরে রয়েছে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা ও লামার আজিজনগর ইউনিয়ন। তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এ অঞ্চলে। চিকিৎসার জন্য এখানকার মানুষকে কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় পদুয়া ইউনিয়নে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আনোয়ার কামাল বলেন, হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু হওয়া অতিব জরুরি। প্রয়োজনীয় লোকবল ও চিকিৎসক ব্যবস্থা করে হাসপাতালটি চালু করার জন্য আমাদের নবনির্বাচিত এমপি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জনু একুশে পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতালটি নির্মিত হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু না হওয়ায় প্রসূতিদের লোহাগাড়া সদর অথবা পদুয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এটি চালু হলে চুনতিসহ আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের হতদরিদ্র নারীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। কিন্তু এখনও চালু না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
জানতে চাইলে চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. সুধৃতি দাশ বলেন, এখানে মেডিকেল অফিসার পদ দুজনের৷ কিন্তু আমি একজনই আছি। প্রচুর পরিমাণ রোগী আসে। জনবল সংকটে হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। আশা করছি, সব সংকট কাটিয়ে এটি দ্রুত পুরোদমে চালু হবে।
চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আবুল কালাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, কেন্দ্রে জনবল সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। একজন চিকিৎসক আছেন, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন ফার্মাসিস্ট আছেন। একজন নাইটগার্ড আমরা অন্য জায়গা থেকে এনেছি। এখানে আরও কিছু পদ সৃষ্টি হয়নি এখনও। ক্লিনিকটা আমরা স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চালাচ্ছি। জনবলের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জনবল কম। একেবারে না চললেও তো খারাপ। তাই আমরা স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় চালিয়ে যাচ্ছি। মাসে ৫ থেকে ৬টি ডেলিভারি হয়। পদ সৃষ্টি হলে আমরা জনবল নিয়োগ দিতে পারবো।