চট্টগ্রামশিক্ষা

চেয়ারম্যান হয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ফিরে বদলির শোধ তুলছেন রেজাউল

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম অনিয়মের অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বদলির পর এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান হয়ে ফিরে এসেছেন। চেয়ারম্যান হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে যোগদান করেই পূর্বের বদলির শোধ নিচ্ছেন, এমনটাই অভিযোগ নতুন এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণ সংক্রান্ত চলমান দুটি তদন্তের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করারও। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাবোর্ডে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্তমান সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফলাফল সংক্রান্ত বিষয়ে খোদ তদন্ত করলেও রেজাউল করিম চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার পর নিজ উদ্যোগেই বর্তমান সচিবের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে জোর করে বক্তব্য নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একে একে গোপনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের চাপ প্রয়োগ করে তার নিজের চাহিদামতো বক্তব্য লিখিয়ে নিয়েছেন। আর চেয়ারম্যানকে এই কাজে বোর্ডের উপসচিব মো. বেলাল হোসেন সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের একজন অফিস সহকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোপনে ডেকে আনার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের ডেকে বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। বড় স্যারেরা অর্ডার দিলে তো কর্মচারীদের আসতেই হবে, যা বলবে তা করতে হবে। কথায় আছে না- কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। সেটিই হচ্ছে আর কি?

এছাড়াও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান গত বৃহস্পতিবার রহমান নামের একজন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা কর্মচারীকে ডেকে নেন। তাকে একান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার কাছ থেকে বক্তব্য লিখিয়ে নেন উপসচিব বেলাল হোসেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় ডাকা হয় শিবলু ও নোমান নামের আরও দুজন দিনভিত্তিক কাজ করা স্ক্যনারকে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চেয়ারম্যানের চাহিদানুযায়ী বক্তব্য লিখিয়ে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার ডাকা হয় প্রোগ্রামার আব্দুল মালেককে। তাকে একান্তে চেয়ারম্যান এবং উপসচিব জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার কাছ থেকেও তদন্ত বিষয়ক নিজের চাহিদামতো বক্তব্য লিখিয়ে নেন চেয়ারম্যান। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে দোটানায় পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চেয়ারম্যানের ডাকে সাড়া দিয়ে একদিকে যেতে হচ্ছে, তেমনি আবার চেয়ারম্যানের চাহিদা অনুযায়ী বক্তব্যও দিতে হচ্ছে। যেটি তাদের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্বেগের।

শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ডের সচিবের ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ গতবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তবে তিনি একটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পাননি। সেজন্য সচিবের পরিবার পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে চায়। কিন্তু পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে দেখতে পান, কে বা কারা আগেই নক্ষত্র দেব নাথের ছয় বিষয়ের ১২টি পত্রের আবেদন করে ফেলেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সচিবের স্ত্রী বনশ্রী নাথ পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনকারীকে শনাক্ত ও আইনি প্রতিকার চেয়ে গত ৪ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে এ নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেবনাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

এই ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বোর্ডের বর্তমান সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী দেবনাথ। ইদ্রিসকেও আসামি করা হয়েছে কারণ তিনি অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বলে অভিযোগ করেন নারায়ণ চন্দ্র নাথ। অভিযোগ রয়েছে নারায়ণ চন্দ্র নাথের করা মামলার দুই আসামির একজন বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের ঘনিষ্ট বন্ধু।

শিক্ষাবোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা বলছেন, সচিবের স্ত্রীর করা সাইবার মামলাটি একটি সাব-জুডিস বিষয়। এ বিষয়ে আদালতের তদন্ত কর্মকর্তা ব্যতীত কারো জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ নেই। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে জোর করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সচিবের বিরুদ্ধে বক্তব্য লিখিয়ে নিচ্ছেন। এ কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এক ধরণের ভীতি কাজ করছে। যা নিয়ে বোর্ডে এক প্রকার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তবে সচিবের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের কাছ থেকে জোর করে বক্তব্য আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমি তো আমার কর্মচারীদের অফিসিয়াল কাজে ডাকতেই পারি। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *