জাতীয়

জলদস্যুদের ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি ‘ভিত্তিহীন তথ্য’

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। সেখানে নাবিক ও কেবিন ক্রু মিলিয়ে আটকা রয়েছেন ২৩ বাংলাদেশি। জাহাজের মালিকপক্ষ বারবার দস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও জলদস্যুদের থেকে সাড়া মেলেনি। এদিকে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চাইছে জলদস্যুরা— এমন তথ্য চাউর হলেও সেটিকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করেছেন জাহাজের মালিক এসআর শিপিংয়ের মূল প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম।

মূলত দস্যুতার শিকার ওই বাংলাদেশি জাহাজে থাকা উদ্দিন মোহাম্মদ নূর নামে এক নাবিক তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয় আজ (বুধবারে) সকালে। ওই অডিও বার্তায় তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, ‘সবাইকে পাস করে দিও (ছড়িও দিও) যে, আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয় তাইলে আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলবে। এই মেসেজটা সবদিকে পাস করে দিও। এখন মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে।’

ওই অডিও রেকর্ডে জলদস্যুদের টাকা দাবির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও টাকার পরিমাণ উল্লেখ ছিল না। কিন্তু একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন তাদের সরাসরি সম্প্রচারে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবির বিষয়টি প্রথম প্রচার করে। এরপরই সেই তথ্যের বরাতে অন্যান্য গণমাধ্যমও সংবাদ প্রচার শুরু করে।

কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কয়েকটি সংবাদমাধ্যম মুক্তিপণের অর্থের একটি পরিমাণও বলেছে তাদের সংবাদমাধ্যমে। তবে ওই তথ্য ভিত্তিহীন। আমাদের আগের একটি অভিজ্ঞতা আছে। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এটাও উদ্ধার করতে পারব বলে আশা করছি। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।’

প্রায় এক মাস আগে ইরানি একটি ফিশিংবোট জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মাছধরার সেই বোট নিয়ে তারা ভারত মহাসাগরে চষে বেড়াচ্ছিল বড় জাহাজের সন্ধানে। এরই মধ্যে গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর নাগাদ সোমালিয়া কোস্ট থেকে প্রায় ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা পেয়ে যায় চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের ‘এমবি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটি।

সোমালিয়ান জলদস্যুর হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ থেকে গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের পাঠানো এক অডিও বার্তা থেকে জানা গেছে, একটা হাইস্পিড বোট নিয়ে তাদের জাহাজের দিকে আসতে থাকে জলদস্যুরা। জাহাজে উঠে জলদস্যুরা ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। এরপর আরও একটি স্পিডবোটে আসে আরো কয়েকজন। এভাবে মুহূর্তেই প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসে। এরপরই ইরানিয়ান ওই ফিশিং বোট নিয়ে অন্যান্য জলদস্যুরা আসে।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন—জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের এসআর শিপিং এর আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম ‘জাহান মনি’। ৪০ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *