জাতীয়

ঢাকা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় খুলনা, উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা

ট্রেনে চড়ে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে পৌঁছানো যাবে খুলনায়। জুলাই মাসে পদ্মা সেতু রেললিংকের দ্বিতীয় অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন রুটে যাত্রা করবে ট্রেন। যাত্রীচাপ বিবেচনায় খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচল করবে চার জোড়া ট্রেন। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল থেকে এমন প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সদর দফতরে। এমন খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত এ অঞ্চলের যাত্রীরা।

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এখন নিয়মিত চলছে রেল। তবে এ রেলপথ ঢাকা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত। আর পদ্মা রেললিংকের দ্বিতীয় ফেজের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন রেলপথের দৈর্ঘ্য ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত। জুলাই মাসে কাজ শেষে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো পদ্মা রেললিংক। ফলে খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৬৭ কিলোমিটার থেকে ১৯৫ কিলোমিটার কমে দাঁড়াবে ১৭২ কিলোমিটার।

এ নতুন রুটে রেল চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রেল বিভাগ। এরই মধ্যে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল থেকে নতুন রুটের রেলের যাত্রা নিয়ে পাঠানো হয়েছে প্রস্তাবনা।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেসসহ খুলনা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে প্রতিদিন চার জোড়া ট্রেন আসবে ঢাকায়। প্রতিদিন ভোর ৬টা, বেলা সাড়ে ১২টা, দুপুর আড়াইটা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খুলনা থেকে ছেড়ে যশোর, নড়াইল, ভাঙা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে। এতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। প্রস্তাবনায় সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫০ টাকা। এমন খবরে দারুণ উচ্ছ্বসিত খুলনা অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীরা।

খুলনা রেলস্টেশনে কথা হয় ঢাকা থেকে ফেরা বেশ কজন যাত্রীর সঙ্গে। এদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম নামে একজন জানান, কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে তাকে ঢাকায় যেতে হয়। বাসে যাওয়ার চেয়ে ট্রেনে যাতায়াতকে আরামদায়ক মনে করেন  তিনি। তিনি বলেন, ‘এখন তো ট্রেনে যেতে আমাদের প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। শুনলাম জুলাই থেকে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ট্রেনে যাওয়া যাবে। এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা খবর। জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে আমরা দিনে দিনে আবার ঢাকা থেকে খুলনায়ও ফিরতে পারব।’

বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই ঢাকায় যান হিমাদ্রি শেখর। তিনি বলেন, ‘এক পদ্মা সেতু আমাদের কতকিছু দিয়েছে। এবার খুলনা থেকে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যেতে পারবো — এটা সত্যিই দারুণ খবর। আমরা চাই দ্রুত এ লাইনটা চালু হোক।’

আরেক যাত্রী শামছুল আলম বলেন, ‘খুলনা থেকে ঢাকায় নতুন এই রুটের জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। এ লাইনে যাত্রীচাপ আরও বাড়বে। আমার মতো অনেকেই তখন বাসের পরিবর্তে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় যাবে। আমার মনে হয়, রেল কর্তৃপক্ষের এখন থেকেই সে ধরেনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা উচিত।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাৎ আলী বলেন, ‘আমরা এমন একটা প্রস্তাব পেয়েছি, যে প্রস্তাবে প্রতিদিন চার জোড়া করে ট্রেন ঢাকায় যাতায়াত করার কথা। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটা এখন যাচাই-বাছাই চলছে। ট্রেনের গতিবেগ, স্টেশন সংখ্যা, যাত্রীচাপ — সব বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করছি। জুলাই মাসে নতুন রেলপথ উন্মুক্ত করার আগেই এ বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’

এদিকে, যাত্রীচাপ বাড়ার সম্ভাবনা সামনে রেখে বাড়তি টিকিটের বুথসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খুলনা রেল কর্তৃপক্ষ।

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘নতুন রেললিংক চালু হবে। খুলনা থেকে সব ট্রেনই পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। নতুন করে টিকিটের বুথ বাড়ানো হচ্ছে। অন্যান্য প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *