আনোয়ারাচট্টগ্রাম

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতি, শেষমেশ জনতার হাতে পিটুনি!

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াব আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ অবশেষে বিস্ফোরিত হলো। রবিবার (১৮ আগস্ট) সকালে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে জনতার হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।

নোয়াব আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ জনগণের প্রতি নির্দয় আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জায়গা দখল, ওয়ারিশ সনদে হয়রানি এবং সালিশে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুছা তালুকদার এ ঘটনাকে “চেয়ারম্যানের কর্মফল” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মনসূর আলী নামের এক যুবক জানান, নোয়াব আলী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বৈরাগবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জায়গা দখল, ওয়ারিশ সনদ নিয়ে হয়রানি এবং সালিশে পক্ষপাতিত্ব করে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছে।

ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুছা তালুকদার বলেন, “এটা ওনার কর্মফল। দুর্নীতির সীমা থাকা উচিত, কিন্তু নোয়াব আলী কোনো সীমা মানেননি। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মতামত না নিয়ে এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উন্নয়ন তহবিলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।”

বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নজরুল ইসলাম জানান, “কিছু লোক হঠাৎ করে পরিষদ মাঠে এসে চেয়ারম্যানকে মারধর শুরু করে। তিনি পালানোর চেষ্টা করলে তাকে ধরে নিয়ে আরও মারধর করা হয়।”

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন বলেন, “এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি থানায়।”

এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নোয়াব আলী। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকে। ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পাননি।

বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াব আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে একই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুছা তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান নোয়াব আলী গত তিন অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স, ভূমি উন্নয়ন কর, ট্রেড লাইসেন্স ফি, এবং উপজেলা থেকে প্রাপ্ত ১% অর্থসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

মুছা তালুকদার আরও জানান, ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছিল, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স বাবদ প্রতি বছর ১২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। তবে এসব অর্থ কোন প্রকার উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার না করে চেয়ারম্যান নোয়াব আলী আত্মসাৎ করেছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, নোয়াব আলী উন্নয়ন তহবিল, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এবং এডিপির প্রকল্পগুলোতে একক সিদ্ধান্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোনটা আংশিক এবং কোনটা বাস্তবায়ন না করেই অর্থ আত্মসাত করেন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও একইভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মুছা তালুকদার বলেন, “বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার রেজুলেশন ছাড়াই চেয়ারম্যান নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করে উপজেলা অফিসে পাঠান। ইউপি সদস্যদের মতামত না নিয়ে তিনি ভিজিএফ কার্ডের তালিকা পাঠিয়েছেন। এছাড়াও চেয়ারম্যান মিটিং না করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ইউপি সদস্যদের রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করেন।”

মুছা তালুকদার অভিযোগ করে আরও জানান, চেয়ারম্যান নোয়াব আলী জন্ম নিবন্ধনের জন্য ৩০০ টাকা, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ১২০০ টাকা এবং চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেটের জন্য ১২০ টাকা করে নেন, যা সচিবের মাধ্যমে সন্ধ্যায় বুঝে নিয়ে বাড়ি যান। এছাড়াও, পরিষদের তহবিল থেকে চেয়ারম্যানের মোটরসাইকেলের ড্রাইভারের মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়, যা বিধি সম্মত নয়। এমনকি দলীয় ব্যানার-পোস্টার ছাপানো খরচসহ ফকিরের খয়রাত পর্যন্ত পরিষদের অর্থ থেকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ফোন না ধরায় এসব অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান নোয়াব আলীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *