চট্টগ্রামরাজনীতি

নগর আওয়ামী লীগ : এক কমিটিতে পার ১১ বছর

টানা ১১ বছর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে একই কমিটিতে। নতুন নেতৃত্ব না আসায় নেতাকর্মীরা হতাশ। দুই শীর্ষ নেতার আলাদা বলয়ের কারণে কোন্দলের পাশাপাশি বাড়ছে বিভক্তিও। ফলে বছরের পর বছর পার হলেও তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠন সম্ভব হয় না।

সম্মেলনের পরিবর্তে ঢাকা থেকে ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কমিটি। এতে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। ২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথমে ভারপ্রাপ্ত ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পান কমিটির সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন দুই ধারায় বিভক্ত। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর একটি অংশের হাল ধরেছেন তাঁর ছেলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আরেক অংশ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

অভিযোগ রয়েছে, দু’পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয়েছে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম। হাইকমান্ড নির্দেশ দিলেও বন্ধ হয়নি দলাদলি। যখনই দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই অভ্যন্তরীণ কোন্দল চাঙ্গা হয়। এতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও বিব্রত। যদিও নগর আওয়ামী লীগে নিজের বলয় থাকার কথা স্বীকার করেন না নওফেল।
সূত্র জানায়, সাংগঠনিক অচলাবস্থা দূর করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল পুনর্গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের রোডম্যাপও দিয়েছেন। সে অনুসারে অক্টোবরের মধ্যে করতে হবে সম্মেলন। তার আগে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের সম্মেলনগুলো করতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামে দল পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অক্টোবরের মধ্যে করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে হবে সাংগঠনিক জেলার সম্মেলনও। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। বিষয়টি নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, যথাসময়ে সম্মেলন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনে ব্যক্তির সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, দল পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হলে আগের মতোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে কোন্দল। তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিতে পছন্দের প্রার্থীকে জায়গা দিতে দুই নেতার লড়াইয়ে ভেস্তে যেতে পারে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।
গত ১১ বছরে মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৩২ ইউনিটের মধ্যে ১০৫, ৪৪ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯ ও ১৫ থানার মধ্যে মাত্র একটি থানার সম্মেলন হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে ২৭ ইউনিট, ১৫ ওয়ার্ড ও ১৪ থানার সম্মেলন শেষ করতে হবে। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, শোকের মাস আগস্টে পুনর্গঠন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সেপ্টেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। ফলে সময় থাকবে জুন ও জুলাই।

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘ইতোমধ্যে বেশির ভাগ ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। স্থানীয় নেতৃত্বের অনীহা ও আন্তরিকতার অভাবে বাকিগুলোর সম্মেলন হয়নি। স্থানীয় নেতৃত্ব ঐকমত্যে না পৌঁছালে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যায় না। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা ও রোডম্যাপ দিয়েছেন। বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে অক্টোবরের মধ্যেই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে আশা করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *