ধর্ম

নামাজে ঘুম চলে এলে করণীয়

সুস্থ থাকতে ঘুমের বিকল্প নেই। একজন সুস্থ মানুষের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একটানা ঘুম সবচেয়ে ভালো। তবে যদি কাজের প্রয়োজনে আপনি একটানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে না পারেন, তবে ভাগ করে ঘুমাতে হবে।

পরিমাণ মতো হলে সব কাজ করা যায় ঠিকমতো। ক্লান্তি বা অলসতা তৈরি হয় না। তবে বিভিন্ন ব্যস্ততা, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ ও সময়ের থেকে ঘুম কম হয়। এতে স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্মে বিঘ্নতা তৈরি হয়।

অনেক সময় নামাজের মধ্যে ঘুম পেয়ে বসে। কারো কারো চোখে নামাজের সময় ঝিমুনি আসে, কেউ বা ঘুমের ঘোরে ঢলে পড়েন। নামাজে আছেন নাকি অন্য কিছুতে তা ঠাহর করতে পারেন।

নামাজের সময় যদি ক্লান্তির কারণে কারো চোখে এতোটা ঘুম চলে আসে যে, তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। যেমন, কেউ নামাজে এতোটা ঘুমিয়ে পড়লেন যে, বৈঠকে বসে ছিলেন কিন্তু ঘুমের প্রাবল্যের কারণে পড়ে গেলেন, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলেন না, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে।

আর যদি নামাজে শুধু ঝিমুনি আসে তাহলে এর কারণে নামাজ ভাঙবে না।

মহানবী সা. ক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। নামাজসহ ইবাদত বন্দেগিতে যখন ক্লান্তি চলে আসবে তখন বিশ্রাম গ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন মহানবী সা.।

হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. একবার মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন, একটি রশি দুটো খুঁটির মাঝখানে বাঁধা আছে। তিনি বললেন, ‘এ রশিটা কিসের জন্য?’ সাহাবিগণ বললেন, ‘এটা জয়নবের রশি।’ তিনি যখন নামাজ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন এ রশিতে ঝুলে থাকেন।’ রাসূল সা. বললেন, ‘এটা খুলে ফেল। তোমাদের প্রত্যেকের উচিত উদ্যম সহকারে নামাজ পড়া। আর যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন ঘুমিয়ে পড়বে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

এ হাদিসের মাধ্যমে আমরা যে শিক্ষা লাভ করি তাহলো—

১. এ হাদিসে মধ্যমপন্থা অবলম্বন না করে নিজের প্রতি কঠোরতা আরোপ করার একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হজরত জয়নব রা. নিজের নিদ্রাভাব দূর করার জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন; যেন তিনি বেশি করে নামাজ আদায়ে সক্ষম হন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা.তাঁর এ কাজকে অনুমোদন দেননি। রাসূল সা. তাঁর উম্মতকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন ও কঠোরতা পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

২. যখন কারো ঘুম আসে তখন ঘুম যাওয়াটা হলো তার কর্তব্য। নফল নামাজের জন্য নিজেকে এতোটা কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।

৩. অনেককে দেখা যায় নামাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেও নামাজ অব্যাহত রাখেন। এরূপ করা ঠিক নয়। ঘুমের ঘোরে নামাজ, প্রার্থনা বা ইবাদাত-বন্দেগি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এছাড়া মনে রাখতে হবে, যেসব কারণে নামাজ ভেঙে যায় তার অন্যতম একটি হলো ঘুম। নামাজে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে নামাজ ভেঙে যায়।

(আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৪৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৬৩; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৩)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *