চট্টগ্রাম

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত হচ্ছে

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও বিজয়নগর এলাকায় দুই সরকারি বিদ্যালয় নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট ও বালি। এছাড়াও প্রয়োজনীয় টেস্ট ছাড়াই চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অবহেলার কারণে এমন মানহীন কাজ হচ্ছে বলে প্রমাণ পান স্থানীয় সাংসদ। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত হচ্ছে

গত রবিবার চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ নির্মাণাধীন সরকারি দুই বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ভবন নির্মাণে এসব অনিয়ম দেখতে পান। এ সময় উপস্থিত থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার তাৎক্ষণিক এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেন।

জানা যায়, ‘৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাস্টারদা সূর্যসেন সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ হচ্ছে নগরীর উত্তর পতেঙ্গা এলাকায়। প্রায় দুই একর ভূমির উপর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা।

পূর্ব পতেঙ্গার বিজয়নগর এলাকায় নির্মিত হচ্ছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্কুল এন্ড কলেজ। প্রায় এক একর ভূমির উপর নির্মাণাধীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দুটি ভবনই হবে ১০ তলা বিশিষ্ট।

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত রবিবার বিদ্যালয় দুটিতে আকস্মিক পরিদর্শনে যান সাংসদ এম এ লতিফ। মাস্টারদা সূর্যসেন সরকারি স্কুল এন্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনটি পরিদর্শনের সময় নি¤œমানের মালামাল ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় টেস্ট ছাড়াই ভবন নির্মাণের প্রমাণ পান সাংসদ। ঠিকাদারও নি¤œমানের এসব মালামাল ব্যবহারের কথা স্বীকার করে নেন।

অন্যদিকে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সরকারি স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শনের সময় ঠিকাদার কিংবা দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাননি সাংসদ। সেখানেও নি¤œমানের মালামাল ব্যবহার ও পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় সিলিন্ডার টেস্ট ছাড়াই ভবন নির্মাণের প্রমাণ পান। তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীও জানাতে পারেননি কী কারণে ঠিকাদারদের এমন অনিয়ম। তবে তিনিও অনিয়মের কথা স্বীকার করে নেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দীলিপ কুমার নাথ বলেন, ইট নিয়ে সাংসদের অভিযোগ ছিল, এখানে নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটগুলো পরিবর্তনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যে লবণ বালির কথা হয়েছে, তা আমরা পূর্বে টেস্ট করেছি। কিন্তু আমরা সেখানে লবণ বালির প্রমাণ পাইনি। অভিযোগের সত্যতা জানতে সাংসদ বালিগুলো পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা শেষে জানা যাবে। সিলিন্ডার টেস্ট চারটির মধ্যে দুটি করা হয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে।

সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত লিখিতভাবে জানানো হবে। স্ল্যাব কাস্টিংয়ের সময় সিলিন্ডার টেস্ট করতে হয়, চারটির মধ্যে তারা দুটি সিলিন্ডার টেস্ট করিয়েছে, বাকি দুটি করায়নি। সিঁড়ি ঢালায় দেয়ার সময় যথাযথ শাটারিং না করার কারণে সিমেন্ট এবং বালি বের হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও খুবই নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজের এত অনিয়মের মধ্যেও দায়িত্বশীলরা কোন ভূমিকা রাখেনি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমি যা দেখেছি তা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে জানাবো। যথাযথ তদন্ত করে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরের ৭টি স্কুলে ১০ তলা বিশিষ্ট এবং জেলা-উপজেলা শহরের ২টি ছয়তলা বিশিষ্ট স্কুল স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পরবর্তীতে স্কুলের জায়গায় সবগুলোকে স্কুল এন্ড কলেজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে আইসিটি ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, মাল্টিপারপাস হলরুম, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষক কমনরুম, নামাজের কক্ষ, দর্শনার্থী কক্ষ, বিএনসিসি, গার্লস গাইড কক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষ, মিড ডে মিল কক্ষ ও সেমিনার কক্ষ।

২০১৮ সালে নেয়া প্রকল্পটির প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সম্প্রতি যা আরও দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *