চট্টগ্রাম

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে নেই পরিকল্পনার ছাপ, অবৈধ দখলে সৌন্দর্য ম্লান

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। এ সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সাগরের কোল ঘেঁষে বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিং রোড নির্মাণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এ প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গায় সাগরপাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় পর্যটন কেন্দ্র।

পরিকল্পনা ছিল এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আধুনিক সব পর্যটন সুবিধা এবং অককাঠামোগত আধুনিক নির্মাণ শৈলীতে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেটি আর হয়নি। বরং এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ দোকান। ওয়াকওয়েতে তো বটেই এমনকি বালিয়ারিতেও ভাসমান দোকানে ঠাসা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে ঢুকতেই সারি সারি পর্যটকদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লোক পার্কিং থেকে কোনো রশিদ ছাড়াই টাকা আদায় করছেন। অথেচ একটু দূরেই যানজট নিরসনে তদারকি করছেন ট্রাফিক সদস্যরা। তবে তাদের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। একটু ভেতরে যেতেই আবার মোটরসাইকেলের পার্কিং। সেখানেও নেওয়া হচ্ছে পার্কিং চার্জ। ওয়াকওয়েতে উঠতেই যেখানে আগে সাগর দেখা যেত, সেটি এখন ঢাকা পড়েছে দোকানের সারিতে। আবার ওয়াকওয়ের একপাশে নাগরদোলা সহ বিভিন্ন রাইড বসানো হয়েছে। পুরো ওয়াকওয়ের তিনভাগের দুইভাগই দোকান-রাইড বসিয়ে দখলকারীরা। এসব দোকানের আবর্জনা আবার ফেলা হচ্ছে সেখানেই। পুরো ওয়াকওয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো কোনো গাছের আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না। বালিয়ারিতেও স্বস্তি নেই পর্যটকদের। বিচ বাইক রাইড, ঘোড়ার গাড়ির আসা যাওয়া বার বার বিরম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরা। মূল সমুদ্র সৈকতের প্রস্থ কম হওয়ায় লোক সমাগম বেশি হওয়ায় পর্যটকরা ঠাসাঠাসি করেই সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

সৈকতে ঘুরতে আসা রোমানা ইসলাম বলেন, পুরো সৈকত এলাকা দোকানে ঠাসা। ছুটির দিন হওয়ায় এখানে অনেক পর্যটক। হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের একটু বিরম্বনায় পড়তে হয় ঘুরতে ফিরতে। এ সৈকতের সৌন্দর্য পুরোটাই নষ্ট করে ফেলেছে দখলকারীরা।

জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কয়েকটি চক্র হকার সংগঠনের নামে এ জায়গা দখলের মহোৎসব শুরু করেছে। দোকান বরাদ্দের নামে প্রত্যেক ব্যক্তির থেকে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। ভাড়া হিসাবে দোকান ও ভাসমান হকার প্রত্যেকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হয়। এখন ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’র উপরে স্থায়ী অবৈধ দোকান রয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগার উপরেই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত দখল ও চাঁদাবাজি চললেও সবাই অদৃশ্য কারণে নিশ্চুপ৷ তাই দীর্ঘদিনেও এ দখল থেকে থেকে মুক্ত হতে পারেনি এ সমুদ্রসৈকত এলাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ছুটির দিনে এখানে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয় । শুধু গাড়ি পার্কিং থেকে তারা দুই লাখ টাকার বেশি চাঁদা তুলেন। ছুটির দিনে অনেক ভাসমান হকারও আসেন তাদের থেকেও চাঁদা নেওয়া হয়।

তবে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোডের প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদের পর এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে যে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ছিল সেটির বাস্তবায়নের কাজও শুরু হবে। সে অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *